কোরবান আলী

শহীদ বুদ্ধিজীবী ‘কোরবান আলী’ ছিলেন পেশায় চিকিৎসক। জন্ম ১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের দুর্গাপুরে। তাঁর বাবা মহিউদ্দীন মিঞা, মা এসমা খাতুন। ডা.কোরবান আলী ফরিদপুর জেলা বোর্ডের স্বাস্থ্য বিভাগে কর্মরত ছিলেন। একাত্তরের ১৫ মে নিখোঁজ হন। পরিবারের লোকেরা জানতে পারেন, পাকিস্তানি হানাদার সেনারা তাঁকে হত্যা করেছে। তবে স্বজনেরা লাশ পাননি।

কোরবান আলী নবাবগঞ্জ হরিমোহন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৪৭ সালে মাধ্যমিক এবং ১৯৫২ সালে তৎকালীন রাজশাহী মেডিকেল স্কুল থেকে এলএমএফ পাস করে ফরিদপুর জেলা বোর্ডের স্বাস্থ্য বিভাগে চাকরিতে যোগ দেন। কর্মজীবনে তিনি ফরিদপুর, সাজাইল, ভাঙ্গা ও বোয়ালমারীর চ্যারিটেবল ডিসপেনসারিতে চিকিৎসা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক চর্চা ও খেলাধুলা করতেন। মঞ্চনাটকে অভিনয় করে প্রশংসিত হয়েছেন। এছাড়া দাবা, ফুটবল ও ভলিবলে পারদর্শী ছিলেন। ফরিদপুর এলাকায় রেডক্রস আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের নিজ গ্রামে ও কর্মস্থলে পাঠাগার গড়ে তুলেছিলেন। বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজে অংশ নিতেন। যুক্ত ছিলেন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতেও।

শহীদ কোরবান আলী বাংলাদেশের স্বাধিকার ও স্বাধীনতার পক্ষে সোচ্চার ছিলেন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠছে বুঝতে পেরে গণহত্যা শুরুর আগেই একাত্তরের ২০ মার্চ তিনি স্ত্রী সালেহা বেগম ও চার ছেলেকে গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের দুর্গাপুরে পাঠিয়ে দেন। স্বাধীনতার পক্ষে সক্রিয় থাকায় স্থানীয় পাকিস্তানপন্থীরা কোরবান আলীর ওপর নাখোশ ছিল। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে বোয়ালমারীতে থাকা কোরবান আলীর পক্ষে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। তিনি গ্রামে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

এদিকে গ্রামের বাড়ি থেকে তাঁর পরিবারের সদস্যরা ফরিদপুরে নানাভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করে কোরবান আলীর কোনো খোঁজ পাননি। তাঁরা ফরিদপুরে তাঁর অফিসেও যোগাযোগ করেন। অবশেষে অফিস থেকে তাঁর স্ত্রীর কাছে একাত্তরের ১০ জুন চিঠি দিয়ে জানানো হয়, কোরবান আলী ১২ মে ছুটি নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জে চলে গেছেন। এরপর তাঁর স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যরা জুলাই মাসের শেষ দিকে ফরিদপুরে এসে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, পাকিস্তানি হানাদার সেনারা কোরবান আলীকে হত্যা করেছে।

কোরবান আলীর স্ত্রী সালেহা বেগম বেঁচে আছেন। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর কাছে সমবেদনা জানিয়ে চিঠি ও দুই হাজার টাকার অনুদান পাঠিয়েছিলেন। তাঁদের সুযোগ্য সন্তান ডা. আবু রাকিব সুচিকিৎসক ও গবেষক, দ্বিতীয় ছেলে এ্যাড.আবু হাসিব চাঁপাইনবাবগঞ্জের আইনজীবী ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। ডা.কোরবান আলীর পরিবার বর্তমানে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের কাঁঠালবাগিচায় স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। {অসমাপ্ত……/ বিস্তারিত প্রকাশিতব্য গ্রন্থ- ‘আলোকিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ’ www.alokito-chapainawabganj.com (চাঁপাইনবাবগঞ্জের দু’শো বছর ইতিহাসের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সংক্ষিপ্ত জীবনী-১ম ও ২য় খণ্ড), লেখক- মাহবুবুল ইসলাম ইমন}