নজরুল ইসলাম

বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম বিশিষ্ট প্রযোজক, পাকিস্তান এয়ারফোর্সের সাবেক ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার ‘মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম’ ১৯৩০ সালের ১৪ জুন তৎকালীন মালদহ জেলার (চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও ভারতের কিছু অংশ) কালিয়াচকের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা প্রয়াত ইদ্রিস আলী মালদাহ জেলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার আলীনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবি প্রফেসর ড.মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম হলেন তাঁর বড় ভাই। নজরুল ইসলাম ১৯৮২ সালে বিয়ে করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার মচকইল গ্রামের আলতাফুন্নেসাকে । তিনি দুই ছেলে ও এক মেয়ের জনক। ছোটবেলা থেকেই নাটক, সিনেমা, গান খুব পছন্দ করতেন। স্কুল-কলেজের বিভিন্ন মঞ্চ নাটকেও সেই সময় তিনি অভিনয় করেন।
নজরুল ইসলাম ১৯৫২ সালে মহান ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ২১ ফেব্রুয়ারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার ভাষা আন্দোলনের মিছিল হতে আটক হন এবং ‘আন্দোলনকারী গুরুতর অপরাধী’ হিসেবে প্রায় ১ মাস কারাবরণ করেন। একই বছর ২০ এপ্রিল তৎকালীন ‘রয়্যাল পাকিস্তান এয়ারফোর্স’-এ কমিশন্ড অফিসার হিসেবে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে পদোন্নতি পেয়ে ‘ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার’ পদে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬১ সালে বিমানবাহিনী হতে পদত্যাগ করে পাকিস্তানের করাচীর চার তারকা হোটেল‘এক্সেলসিয়র’ এ ম্যানেজার পদে যোগ দেন। এরপর তিনি দুবাই এর জুমেইরাহ সৈকতে পাঁচ তারকা হোটেল ‘কার্লটন’-এ ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় তিনি জার্মান, জাপান, ইংল্যান্ড, আফগানিস্তান, ইরান, ইরাক, থাইল্যান্ড, সিংঙ্গাপুর, ফ্রান্স, সৌদিআরব প্রভৃতি দেশ ভ্রমন করেন। বিভিন্ন দেশ ভ্রমন করার অভিজ্ঞতার জন্য শেষ বয়সে তিনি ডলার নামেই সকলের কাছে অধিক পরিচিত হয়ে ওঠেন।
সংস্কৃতি অনুরাগী মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশে এসে বাংলা চলচ্চিত্রে প্রযোজনা শুরু করেন। তাঁর প্রযোজিত বেশ কয়েকটি সিনেমা জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং ব্যবসা সফল হয়। প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক ‘দিলিপ বিশ্বাসের’ পরিচালনা ও ‘নজরুল ইসলামের’ প্রযোজনায় নির্মিত ‘সমাধি’ (১৯৭৬), ‘আসামী’ (১৯৭৭) নামক বিখ্যাত সিনেমা দু’টি সেই সময় ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং ব্যবসা সফল হয়। পরবর্তীতে ‘অনুরোধ’ এবং ‘শাপমুক্তি’ নামের আরও দু’টি চলচ্চিত্র নির্মাণ করে প্রযোজক হিসেবে তিনি খ্যাতি অর্জন করেন। প্রখ্যাত অভিনেতা/অভিনেত্রী রাজ্জাক, শাবানা, উজ্জ্বল, সুচরিতাসহ অনেক গুণি অভিনয় শিল্পীরা নজরুল ইসলাম প্রযোজিত সিনেমাতে সেই সময় অভিনয় করেন। ২০০৮ সালের ৩১ মে প্রখ্যাত চলচ্চিত্র প্রযোজক, ভাষা সংগ্রামী ‘মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম’ মৃত্যুবরণ করেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর কেন্দ্রীয় কবরস্থানে তাঁর কবর রয়েছে। { অসমাপ্ত…/বিস্তারিত প্রকাশিতব্য মূল গ্রন্থ- ‘আলোকিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ’ (চাঁপাইনবাবগঞ্জের দু’শো বছর ইতিহাসের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সংক্ষপ্তি জীবনী}