মজিবুর রহমান

ব্যবসায়ী নেতা-সমাজসেবী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শিল্প ও বণিক সমিতির সাবেক সভাপতি (৩ বার), সাবেক ছাত্রনেতা ‘মো.মজিবুর রহমান’ ১৯৪৮ সালের ৩ নভেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের ইসলামপুর মহল্লায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা আফসার হোসেন ছিলেন স্বনামধন্য ব্যবসায়ী। পিতা আফসার হোসেন ও চাচা আলতাফ হোসেন দুই ভাইয়ের যৌথনামে তাঁরা কয়েকপুরুষ যাবৎ সুনামের সাথে পারিবারিকভাবে বিভিন্নরকম ব্যবসা করে আসছেন।

মজিবুর রহমান ১৯৬৩ সালে হরিমোহন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন, ১৯৬৫ সালে নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট এবং পরবর্তীতে নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে বি.এ ডিগ্রী অর্জন করেন। স্কুল-কলেজ জীবনে ভালো ক্রিকেট ও হকি খেলোয়ার হিসেবে তাঁর পরিচিতি ছিল।

তৎকালীন ন্যাপের নেতা, ভাষাসৈনিক এ্যাড. আহম্মদ উল্লাহ চৌধুরীর হাত ধরে তিনি ছাত্রজীবনে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের প্রগতিশীল রাজনীতির সাথে যুক্ত হোন। ১৯৬৩-১৯৭০ পর্যন্ত নবাবগঞ্জ মহকুমা ছাত্র ইউনিয়নের (মেনন) সভাপতি ও ১৯৬৯ সালে ১১ দফার ভিত্তিতে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহকুমার আহবায়কের দায়িত্ব পালন করেন তৎকালীন তুখোর ছাত্রনেতা মজিবুর রহমান।
ভাষা সৈনিকদের সম্মানার্থে ১৯৬৫ সালে নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজে বাঁশ দিয়ে বেদি তৈরি করে অস্থায়ীভাবে প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তাঁর এই উদ্যোগের সাথে জড়িত ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের মিজানুর রহমান মিজু, মজিবুর রহমান সোনা প্রমুখ। পরবর্তীতে তাঁদের এই অস্থায়ী শহীদ মিনারের পাশে কলেজ কর্তৃপক্ষ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ করেন।

১৯৭২-১৯৭৬ সাল পর্যন্ত তিনি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) এর চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহকুমার সিনিয়র সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তী সময়ে ১৯৮৩ সালে তৎকালীন আ.লীগের নেতা ডা. বুল-বুলে গুলেস্তানের হাত ধরে আ.লীগে যোগদান করেন এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর আ.লীগের সদস্যর দায়িত্ব পালন করেন।

ব্যবসায়ী ও সমাজসেবী হিসেবে তাঁর সুনাম রয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রথম বেসরকারি কলেজ শাহনেয়ামতুল্লাহ কলেজ প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। ১৯৭৯ সালে প্রস্তাবিত শাহনেয়ামতুল্লাহ কলেজের প্রজেক্ট কমিটির সদস্য ছিলেন মজিবুর রহমান। পরবর্তীতে ৯ সদস্য বিশিষ্ট শাহনেয়ামতুল্লাহ কলেজের প্রতিষ্ঠাকালীন গভর্নিং বডির সদস্য এবং অর্থ সাব-কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৭৯, ১৯৮০ এবং ১৯৮১ সালে পরপর ৩ বার তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শিল্প ও বণিক সমিতির (চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি) নির্বাচিত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। উল্লেখ্য, ১৯৭৯ সালে শিল্প ও বণিক সমিতির নির্বাচনে তৎকালীন সংসদ সদস্য এবং শিল্প ও বণিক সমিতির (ক্ষমতাসীন/নির্বাচনকালীন) সভাপতি সৈয়দ মঞ্জুর হোসেনকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে সভাপতি নির্বাচিত হোন মজিবুর রহমান।
১৯৮৬ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ঠিকাদার সমিতি প্রতিষ্ঠায় তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। পরবর্তীতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ঠিকাদার সমিতির প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি থাকাকালীন সময়ে চক্ষুশিবির ও ত্রাণ বিতরণসহ বিভিন্ন সেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেন। সেই সময় তিনি বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড ও ক্রীড়াঙ্গনে পৃষ্ঠপোষকতা করেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সাধারণ পাঠাগারের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদকের (১৯৮০-৮২) দায়িত্ব পালন করেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ শিশু শিক্ষা নিকেতনের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য, চাঁপাইনবাবগঞ্জ রাইফেল ক্লাবের প্রতিষ্ঠাকালীন সহ-সভাপতি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাবেক ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক (১৯৯৩-১৯৯৪), নবাবগঞ্জ শরীরচর্চা কেন্দ্রের সাবেক সভাপতি (১৯৮০), সবুজ সংঘের উপদেষ্টা, উত্তরায়ণ সাংস্কৃতিক পরিষদের কার্যনির্বাহী সদস্য (১৯৮১), রাজশাহী জেলা শিল্প ও বণিক সমিতির সহ-সভাপতি, রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির আজীবন সদস্য, অন্ধ কল্যাণ সমিতির আজীবন সদস্য, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ক্লাবের আজীবন সদস্যসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত রয়েছেন। {অসমাপ্ত……/ বিস্তারিত প্রকাশিতব্য গ্রন্থ- ‘আলোকিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ’ www.alokito-chapainawabganj.com (চাঁপাইনবাবগঞ্জের দু’শো বছর ইতিহাসের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সংক্ষিপ্ত জীবনী-১ম ও ২য় খণ্ড) লেখক- মাহবুবুল ইসলাম ইমন}