শেখ লাল মোহাম্মদ

বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী, শিক্ষক ও সাংস্কৃতিক সংগঠক- ‘ওস্তাদ শেখ লাল মোহাম্মদ’ ১৯৩৫ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের ফকিরপাড়া মহল্লায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা শেখ আশরাফ গণি ও মাতা নূর জাহান বেগম।

নজরুল সংগীত ও রবীন্দ্র সংগীতসহ আধুনিক গানের ওস্তাদ ছিলেন শেখ লাল মোহাম্মদ। শেখ লাল মোহাম্মদের হাত ধরে ১৯৫৮ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রথম সংগীত বিদ্যালয়- ‘আর্ট কাউন্সিল’ গড়ে উঠে। তিনি ছিলেন আর্ট কাউন্সিলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং সংগীতের শিক্ষক। ১৯৬৫ সাল থেকে তিনি রাজশাহী বেতারে অন্যান্য গানের সাথে নিয়মিত রবীন্দ্রসংগীত গাইতেন।

আর্ট কাউন্সিল ছাড়াও পরবর্তী সময়ে তিনি এলাকার সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ‘বাণী বিতান’ নামে আরেকটি সংগীত বিদ্যালয় (সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান) প্রতিষ্ঠা করেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের সংগীতাঙ্গন ও শিল্পী তৈরির ক্ষেত্রে ওস্তাদ শেখ লাল মোহাম্মদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। তৎকালীন সময়ের বিখ্যাত শিল্পী বুলা গোস্বামী, মেহবুব রাজা, নাজিম উদ্দিন, সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ তাঁর হাতে গড়া সংগীত শিল্পী।

ঐতিহ্যবাহী লোকসংস্কৃতি- গম্ভীরা গানের বিকাশে তাঁর অবদান রয়েছে। আধুনিক গম্ভীরার রুপকার শেখ সফিউর রহমান সুফি মাস্টার, সোলায়মান মোক্তার, পশুপতি মোক্তার প্রমুখ প্রথিতযশা গম্ভীরা শিল্পীদের টিমের সাথে দীর্ঘদিন হারমোনিয়াম বাজিয়েছেন। বেশ কিছু গম্ভীরা গানও তিনি রচনা করেন। এছাড়াও ‘বেজি শংক’ নাটকসহ বেশ কিছু নাটক রচনা ও পরিচালনা করে সেই সময় সুনাম অর্জন করেন।

১৯৭২ সালে নাটোর গণভবনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা ও তৎকালীন মন্ত্রীদের সামনে কুতুবুল আলম-রকিবুদ্দিনের গম্ভীরা পরিবেশন টিমের সাথে তিনিও ছিলেন। তিনি মূলত হারিমোনিয়াম বাজাতেন এবং গম্ভীরা দলকে নেতৃত্ব দিতেন।

নবাবগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সংগীতের শিক্ষক হিসেবে মৃুত্যুবধি শিক্ষকতা করেন। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বিচারপতি শাহাবুদ্দিনের সময়কালে জাতীয় পর্যায়ের সংগীত প্রতিযোগিতায় নবাবগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় শ্রেষ্ঠ পুরস্কার লাভ করে। সংগীতের শিক্ষক শেখ লাল মোহাম্মদের নেতৃত্বেই মূলত এই শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন।

তাঁর সুযোগ্য সন্তান ড.শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার (পান্না) দেশের একজন স্বনামধন্য কৃষিবিদ (ইক্ষু বিশেষজ্ঞ)। বর্তমানে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। ওস্তাদ শেখ লাল মোহাম্মদ ১৯৯৬ সালের ১৭ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন। {অসমাপ্ত……/ বিস্তারিত প্রকাশিতব্য গ্রন্থ- ‘আলোকিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ’ www.alokito-chapainawabganj.com (চাঁপাইনবাবগঞ্জের দু’শো বছর ইতিহাসের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সংক্ষিপ্ত জীবনী-১ম ও ২য় খণ্ড) লেখক- মাহবুবুল ইসলাম ইমন}