তাশেম মিঞা উকিল

খ্যাতিমান আইনজীবী ও সমাজসেবক আলহাজ্ব এ.এস.এম ইহ্তিশাম উল-মুল্ক ওরফে তাশেম মিঞা উকিল ১৯২৪ সালের ১ জুলাই চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার দুর্লভপুরের(মাতুতালয়-নানার বাড়ি) এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা প্রয়াত এসাহাক উদ্দিন মিঞা ছিলেন তৎকালীন সময়ের একজন স্বনামধন্য আইনজীবি। তাঁর মাতার নাম প্রয়াত আরফাতুল আরা। ছয় ভাই ও এক বোনের মধ্যে তাশেম মিঞা পিতা-মাতার জ্যোষ্ঠ সন্তান।
তিনি ১৯৪১ সালে নবাবগঞ্জ হরিমোহন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন, ১৯৪৩ সালে রাজশাহী গভ.কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট এবং ১৯৪৫ সালে কৃতিত্বের সাথে বি.এ পাশ করেন। পরবর্তীতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এম.এ (ইতিহাস) পাশ করে আইন বিভাগে ভর্তি হন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পড়া শেষ না করে, ১৯৪৭ দেশ-বিভাগ পরবর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পূণরায় আইন বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৫০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়ে ১৯৫১ সালে রাজশাহী জজ শীপের অধীনে শিক্ষানবিশ আইনজীবী হিসেবে ওকালতি জীবন শুরু করেন। বিশিষ্ট আইনজীবী ইহ্তিশাম উল-মুল্ক ওরফে তাশেম মিঞা ১৯৫২ সালে নবাবগঞ্জ মুন্সেফী আদালতে এবং ১৯৬২ সালে ঢাকা হাই কোর্টে যোগদান করেন। দীর্ঘ ৬৫ বছরের ওকালতি জীবনে একাধিকবার নবাবগঞ্জ কোর্টের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। ঢাকা বার কাউন্সিল (হাইকোর্ট) ২০০০ সালে ওকালতি জীবনের ৫০ বছর উপলক্ষে ‘তাশেম মিঞা উকিলের গোল্ডেন জুবিলী’ পালন করে। পরবর্তীতে ২০১৫ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতি ৬৫ বছর ওকালতি জীবন উপলক্ষে ‘তাশেম মিঞা উকিলের ডায়মন্ড জুবিলী’ পালন করে। উল্লেখ্য যে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ কোর্টে তাশেম মিঞা উকিলই একমাত্র কোন প্রবীণ আইনজীবী, যিনি দীর্ঘ ৬৫ বছর ধরে অদ্যাবধি (৯৫ বছর বয়সেও) ওকালতি পেশায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন।
খ্যাতিমান আইনজীবীই শুধু নয়, ভালো ফুটবল খেলোয়ার এবং সমাজসেবী হিসেবেও তাঁর সুনাম রয়েছে। নবাবগঞ্জ সরকরি কলেজ, নবাবগঞ্জ হরিমোহন উচ্চ বিদ্যালয়, নবাবগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়, নবাবগঞ্জ সাধারণ পাঠাগার, নবাবগঞ্জ টাউনক্লাব, নবাবগঞ্জ কামাল উদ্দিন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা এবং পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন সমাজসেবী এ.এস.এম ইহ্তিশাম উল -মুল্ক ওরফে তাশেম মিঞা। দীর্ঘ ওকালতি জীবন শেষে মৃত্যুর পর তিনি ঢাকা বার কাউন্সিল ও লোকার বার থেকে যে অর্থ পাবেন, তা সম্পূর্ণই জেলা আইনজীবী সমিতি এবং আইনজীবী সমিতির কর্মচারীদের কল্যাণে দান করেছেন।
ব্যক্তিগত জীবনে তিন পুত্র ও এক কন্যার জনক তাশেম মিঞার স্ত্রীর নাম আলহাজ্ব সেলিনা বেগম। বাপ-দাদার আদি ভিটা চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার রাণীহাটি ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুরহাটের চুনাখালি গ্রামে হলেও বর্তমানে এ্যাডভোকেট তাশেম মিঞা স্বপরিবারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের হাসপাতাল সংলগ্ন ‘আ.আ.ম মেসবাহুল হক বাচ্চু ডাক্তার সড়কে’ স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। { অসমাপ্ত…/বিস্তারিত প্রকাশিতব্য মূল গ্রন্থ- ‘আলোকিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ’ (চাঁপাইনবাবগঞ্জের দু’শো বছর ইতিহাসের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সংক্ষপ্তি জীবনী}