এলতাসউদ্দিন

বাংলাদেশের প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ ও গবেষক- প্রফেসর মুহম্মদ এলতাসউদ্দিন ১৯৩১ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের চাঁদলাই গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা এসাহাক মন্ডল ও মাতা আফরোজা বেগম। প্রফেসর এলতাসউদ্দিন ১৯৭০ সালে সরকারি কর্ম কমিশনে ইন্টারভিউ দিয়ে সরাসরি উপাধ্যক্ষ নিযুক্ত হন এবং রাজশাহী টিচার্স ট্রেনিং কলেজে যোগদান করেন। এক বছরের মাথায় তিনি অধ্যক্ষ হয়ে দীর্ঘ ১১ বছর অতিবাহিত করেন। অধ্যক্ষ থাকাকালীন সময় তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা অনুষদের ডীনের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৮২ হতে ১৯৮৩ পর্যন্ত প্রায় দেড় বছর যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং সেখান থেকে বদলি হয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, ঢাকায় চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত হন। সেখানে তিনি দীর্ঘ পৌনে পাঁচ বছর চাকরি করে ১৯৮৮ সালে অবসর গ্রহণ করেন। এরপর থেকে তিনি মাঝে মধ্যে কনসালট্যান্ট হিসেবে কাজ করেছেন শিক্ষার বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে। তাঁর গবেষণার অধিকাংশ কাজই বর্তমানের মূল্যায়ন পদ্ধতি, পাঠদান পদ্ধতি, শিক্ষাক্রম প্রণয়ন ও বিস্তরণ এবং পাঠ্যপুস্তক প্রকাশনার নিয়ে। তাঁর স্টাডির সুপারিশগুলো ক্রমশ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
তিনি যে সব বিষয়ে গবেষণা করেছেন: 1.Worked as a member of the Research Team to conduct the Primary School Mapping Exercise under the UPE second phase Project UNESCO (1991). 2.Worked as a National Consultant UNDP/UNESCO Project under GEP and member of the Research Team working on Secondary Education in Bangladesh: A sub sector study. working. Worked on the Examination performs in Bangladesh (April, 1992 to November, 1992). Etc……
প্রফেসর এলতাসউদ্দিন বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল, সিন্ডিকেট ও সিনেট সদস্য হিসাবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭২ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত এই দশ বছর তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট ও শিক্ষা পরিষদের সদস্য থাকাকালীন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। দীর্ঘ সাত বছর তিনি বাংলাদেশ বিজ্ঞান শিক্ষা সমিতির সভাপতির পদ অলংকৃত করেন। তিনি খান বাহাদুর আহছানউল্লাহ টিচার্স ট্রেনিং কলেজের গর্ভনিং বডির চেয়ারম্যান পদেও অধিষ্ঠিত ছিলেন। বর্তমানে তিনি শিক্ষা প্রকল্পন ও উন্নয়ন গবেষণা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী বোর্ডের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং গবেষণা বোর্ড ও ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য। তাছাড়াও তিনি ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার্ড গ্র্যাজুয়েট, বাংলা একাডেমি ও ঢাকাস্থ চাঁপাইনবাবগঞ্জ সমিতির আজীবন সদস্য এবং বাংলাদেশ Reading Association এর সহ-সভাপতি।
শুধু অধ্যাপক ও গবেষকই নন, লেখক হিসেবেও সুখ্যাতি অর্জন করেছেন প্রফেসর মুহম্মদ এলতাসউদ্দিন। তিনি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের বিভিন্ন সাধারণ বিজ্ঞান বই রচনাসহ বেশ কিছু পাঠ্যপুস্তক সম্পাদনা করেছেন। তিনি সি-ইন-এড, বি.এড. শ্রেণীর বেশ কিছু পাঠ্যপুস্তক রচনা ও সম্পাদনাও করেছেন। তিনি কয়েকটি বই অনুবাদও করেছেন। তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ: উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থাপনা (২০০২), শিক্ষা-সংস্কৃতি ও অন্যান্য প্রসঙ্গ (২০০৭), যাঁদের সান্নিধ্যে ধন্য হয়েছি (২০০৮), আমার দেখা মুক্তিযুদ্ধ (২০০৯), দাদীর আমলের কথা (২০১০), বাবার আমলের কথা (২০১২) চাঁপাইনবাবগঞ্জ পরিচিতি ও লোক সংস্কৃতি (২০১২), নির্বাচিত প্রবন্ধ (২০১৩) এবং বিংশ শতাব্দির চিকিৎসা বিজ্ঞান (২০১৪)। তাছাড়াও দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ও নানা সামাজিক সমস্যা নিয়ে তিনি জাতীয় বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিতভাবে লিখে থাকেন, যা পাঠক মহলে দারুণভাবে সমাদৃত হয়েছে।
শিক্ষাক্ষেত্রে অবদানের জন্য প্রখ্যাত এই শিক্ষাবিদ ও গবেষককে ‘রাজশাহী লেখক পরিষদ” পদক ২০০৭ সালে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের “উত্তরায়ণ সাংস্কৃতিক পরিষদ” প্রদত্ত সম্মাননা পদক ২০১০ সালে, জাতীয় সাহিত্য পরিষদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শাখা থেকে ২০১২ সাালে, রাজশাহী এসোসিয়েশন সম্মাননা পদক (২০১২)সহ বহু জাতীয়-স্থানীয় পর্যায়ের পুরস্কার-সম্মানা প্রদান করা হয়।
বাংলাদেশের প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃতি সন্তান- প্রফেসর ড.আলতাফ হোসেন হলেন প্রফেসর এলতাসউদ্দিনের ছোট ভাই। ব্যক্তিগত জীবনে চার ছেলের জনক প্রফেসর এলতাসউদ্দিনের স্ত্রী হলেন বেগম শামসুন নাহার। তাঁদের সুযোগ্যপুত্র ডা.গোলাম মুকতাদির-ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজে ই.এন.টির অধ্যাপক, মো.আকবর হুসাইন-বাংলাদেশ সরকারের রেলপথ বিভাগের যুগ্ম সচিব এবং ড.এম. আফজাল হুসাইন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন। { অসমাপ্ত…/ বিস্তারিত প্রকাশিতব্য মূল গ্রন্থ- ‘আলোকিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ’ (চাঁপাইনবাবগঞ্জের দু’শো বছর ইতিহাসের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সংক্ষপ্তি জীবনী) }