গুণি শিক্ষাবিদ ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ‘প্রফেসর আবুল হায়াত মিঞা’ ১৯৩৪ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়নের মিঞাপাড়ার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা আবুল মাজেদ মিঞা এবং মাতা জরিনা বেগম। ৬০ এর দশক পরবর্তী সময়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের শান্তিবাগে পরিবারসহ স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন আবুল হায়াত মিঞা।
১৯৪৯ সালে শিবগঞ্জের কানসাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন, ১৯৫১ সালে শিবগঞ্জের আদিনা ফজলুল হক সরকারি কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। পরবর্তীতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় অনার্স এবং ১৯৫৬ সালে মাস্টার্স ডিগ্রী লাভ করেন।
৫০-৮০ দশকের জনপ্রিয় শিক্ষক আবুল হায়াত শিবগঞ্জের আদিনা ফজলুল হক সরকারি কলেজে বাংলার অধ্যাপক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও ১৯৫৫ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ প্রতিষ্ঠা হলে তিনি সেখানে বাংলার অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। দীর্ঘদিন নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজে বাংলা বিভাগের অধ্যাপকের দায়িত্ব পালন করেন। দিনাজপুর সরকারি কলেজ ও রাজশাহী সিটি কলেজেও শিক্ষকতা করেছেন। ১৯৯০ সালে রাজশাহী সিটি কলেজ থেকে তিনি সরকারি চাকুরী হতে অবসরগ্রহণ করেন।
সেই সময়ের চাঁপাইনবাবগঞ্জের সাহিত্য-সাংস্কৃতিক অঙ্গণে তাঁর ছিল অগাধ বিচরণ। ১৯৬২ সালের শেষের দিকে ‘নবাবগঞ্জ সাহিত্য মজলিশ’ নামে চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রথম পূর্ণাঙ্গ সাহিত্য-সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান গড়তে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন অধ্যাপক আবুল হায়াত। এ প্রতিষ্ঠানের প্রথম অধিবেশনে নবাবগঞ্জের অন্যতম ম্যাজিষ্ট্রেট জেড-এ শামছুল হক সভাপতিত্ব করেন। অধ্যাপক আবুল হায়াত এই মজলিশের প্রথম সভাপতি এবং এম-এ মতিন সাহিত্য-রতœ সম্পাদক নির্বাচিত হোন। সদর আহমদ মিঞা, মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন, গোলাম কবির, শাহজামান, মোহিত কুমার দাঁ প্রমুখ এই মজলিশের প্রধান সাহিত্যকর্মী ছিলেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের সাহিত্য-সাংস্কৃতিক বিকাশে এই মজলিশটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই মজলিশ পাকিস্তান রাইটার্স গিল্ড, বাংলা একাডেমি প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে সাথে কাজ করেছে। এই মজলিশ ১৯৬৩ সালে নবাবগঞ্জ কলেজ মিলনায়তনে ‘উত্তরবঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি’ সম্মেলনের আয়োজন করে। যেখানে বাংলা একাডেমির ডাইরেক্টর সৈয়দ আলী আহসান প্রধান অতিথি ছিলেন। লোকসংস্কৃতি গবেষক ও গুণি সাহিত্যক প্রফেসর ড.মযহারুল ইসলাম, প্রফেসর কাজী আব্দুল মান্নানসহ বহু মনীষীগণ সেই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
তৎকালীন নবাবগঞ্জ মহকুমার জনসংযোগ অফিসার, খ্যাতিমান গবেষক, সাহিত্যিক ও সংগঠক- ‘আ.ক.শ নূর মোহাম্মদ’ রচিত (১৯৬৬ সালে প্রকাশিত ঐতিহ্যবাহী চাঁপাইনবাবগঞ্জের ইতিহাসের উপর প্রথম গ্রন্থ) ‘নবাবগঞ্জ পরিচিতি’ নামক গবেষণাধর্মী মৌলিক গ্রন্থের মুখবন্ধ লিখেছিলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক আবুল হায়াত।
প্রবন্ধ, ছোটগল্প ও কবিতা লিখেছেন বেশ কিছু। যেগুলো নবাবগঞ্জ কলেজ সাময়িকীসহ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। তবে ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষার অভিধান’ নামে একটি গবেষণামূলক গ্রন্থের কাজ শুরু করলেও সেটা শেষ করে যেতে পারেননি অধ্যাপক আবুল হায়াত।
দীর্ঘ ৩৫ বছর সুনাম এবং সাফল্যের সাথে শিক্ষকতা করেছেন। মানুষ গড়ার কারিগর-আদর্শ শিক্ষক হিসেবে তাঁর পরিচিতি রয়েছে। শিক্ষকতা জীবনে বহু ছাত্র-ছাত্রী পড়িয়েছেন। যারা আজ জেলার কৃতি সন্তান, দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন উচ্চ পদস্থ সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা।
তিন ছেলে ও দুই মেয়ের জনক। তাঁর সুযোগ্য সন্তান- ‘ড. নুরুল কাদির রোজ’ অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব এবং একজন কৃতী স্কাউটার। তাঁর আরেক সুযোগ্য সন্তান- ‘ডা. আনোয়ার জাহিদ রুবেন’ সুচিকিৎসক (স্ত্রী-রোগ অভিজ্ঞ ও নবাবগঞ্জে প্রথম সোনোলজিস্ট) এবং সমাজসেবী হিসেবে সুনাম অর্জন করেছেন। অন্যান্য সন্তানদের মধ্যে ‘হালিদা এদিব ফ্লোরা’ বেশ কয়েকটি উপন্যাস লিখেছেন এবং রেজা হায়াত বর্তমানে আমেরিকান প্রবাসী। রেজা হায়াত সাইকেলে বিশ্বভ্রমন করে রেকর্ড গড়েছিলেন। {অসমাপ্ত……/ বিস্তারিত প্রকাশিতব্য গ্রন্থ- ‘আলোকিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ’www.alokito-chapainawabganj.com (চাঁপাইনবাবগঞ্জের দু’শো বছর ইতিহাসের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সংক্ষিপ্ত জীবনী-১ম ও ২য় খণ্ড), লেখক- মাহবুবুল ইসলাম ইমন}