মো. ইয়াহিয়া

বিশিষ্ট আইনজীবী ও সমাজসেবী, বাংলাদেশ বার কাউন্সিল সদস্য, রাজশাহী জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক- ‘এ্যাডভোকেট মো. ইয়াহিয়া’ ১৯৫২ সালের ২৪ জুলাই চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলার ফুটানীবাজার এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা হোসেন আলী মোল্লা ও মাতা সহর বানু।

ইয়াহিয়া ১৯৬৮ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট রামেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি, ১৯৭০ সালে রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ থেকে এইচ.এস.সি পাস করেন। পরবর্তীতে একই কলেজ থেকে ১৯৭২ সালে বি.এ ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৯৭৬ সালে রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয় থেকে এল.এল.বি ডিগ্রী লাভ করেন।

ছাত্রজীবনে তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। ১৯৬৬ সালে তৎকালীন ভোলাহাট থানা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতির (১৯৬৬-১৯৭৩) দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৩ সালে ছাত্রলীগ দ্বিখন্ডিত হলে জাসদ ছাত্রলীগে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত জড়িত ছিলেন।

১৯৭৭ সালে রাজশাহী এ্যাডভোকেট বার সমিতিতে আইন পেশায় নিযুক্ত হোন। ২০০৪ সালে রাজশাহী এ্যাডভোকেট বার সমিতি কল্যাণ তহবিল ষ্ট্যান্ডিং কমিটির প্রতিষ্ঠাতা-চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে বেশ কয়েকবার উক্ত কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি একাধিকবার রাজশাহী জেলা আইনজীবী সমিতির সম্পাদক (প্রেস এন্ড ইনফরমেশন) দায়িত্ব পালন করেন।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিল (বৃহত্তর রাজশাহী, কুষ্টিয়া ও যশোর বিভাগ/১১টি জেলার সমন্বয়ে গঠিত) এর নির্বাচিত সদস্য (৬ বার নির্বাচিত) হিসেবে ২০০৪ থেকে অদ্যাবধি দায়িত্ব পালন করছেন। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের রোল এ্যান্ড পাবলিকেশন কমিটির চেয়ারম্যান, ট্রাইব্যুনাল-১ ও ৫ এর চেয়ারম্যান প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন।

দীর্ঘ ৪২ বছরের ওকালতী জীবনে বহু গুরুত্বপূর্ণ মামলা পরিচালনার অভিজ্ঞতা তাঁর রয়েছে। রাজশাহী জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক (২০০২-২০০৩) এবং সভাপতি (২০০৮-২০০৯) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। রাজশাহী জেলা আইনজীবী সমিতির দায়িত্বে থাকাকালীন অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ আইনজীবীদের জন্য কল্যাণ তহবিল ও উৎসব ভাতা চালু করেন। এছাড়াও রাজশাহী জেলা সম্মিলিত আইনজীবী পরিষদের (মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের) আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন বিশিষ্ট আইনজীবী মো. ইয়াহিয়া।

শুধু আইনজীবী নয়, সমাজসেবী হিসেবেও তাঁর পরিচিতি রয়েছে। ২০০৫ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলায় ‘ভোলাহাট কলেজ’ প্রতিষ্ঠায় তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। পারিবারিকভাকে ভোলাহাট কলেজ প্রতিষ্ঠায় প্রায় ২ বিঘা জমিদান করেন। পরবর্তীতে ভোলাহাট কলেজের গভর্নিং বডির প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ভোলাহাট উপজেলার চামুসা সীমান্ত ফাঁড়ি স্থাপনে পারিবারিকভাবে প্রায় ৫ বিঘা আমবাগান দান করেন এ্যাডভোকেট ইয়াহিয়া।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের ‘ভোলাহাট প্রেসক্লাব’ গঠন ও উন্নয়নে তাঁর অবদান রয়েছে। ভোলাহাট উপজেলার একমাত্র গণমাধ্যম ‘সাপ্তাহিক ভোলাহাট সংবাদ’ পত্রিকায় তিনি দীর্ঘদিন পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন। এছাড়াও তিনি ভোলাহাট এলাকার দু:স্থ, অসহায় মানুষদের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রকার সহযোগিতা করে থাকেন।

রাজশাহীস্থ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সমিতির সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ড-রাজশাহীর আইন উপদেষ্টা, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড-রাজশাহীর আইন উপদেষ্টা, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতি-রাজশাহীর সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন।

জনস্বার্থে, নিজ উদ্যোগে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ মামলা-মকাদ্দমা পরিচালনা করে দেশব্যাপি সুনাম অর্জন করেছেন এ্যাডভোকেট ইয়াহিয়া। (১) জনস্বার্থে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীর বই খরিদ বাবদ প্রায় ০২ কোটি টাকা আত্মসাৎ এর বিরুদ্ধে তৎকালীন প্রফেসর আমানুল্লাহসহ জড়িত অন্যান্যদের বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা দায়ের। মামলাটিতে অভিযোগ গঠনের পর তৎকালীন বি.এন.পি সরকার কর্তৃক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রত্যাহার করা হয়। (২) জনস্বার্থে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গণনিয়োগের বিরুদ্ধে মোকদ্দমা দায়ের। (৩) জনস্বার্থে বরেন্দ্র জাদুঘরের বিভিন্ন মুর্তি প্যারিসে প্রেরণের বিরুদ্ধে মোকদ্দমা দায়ের। (৪) জনস্বার্থে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সরকারী ডাক্তারদের প্রাইভেট প্র্যাকটিসের বিরুদ্ধে মোকদ্দমা দায়ের। (৫) জনস্বার্থে পদ্মা শহর রক্ষা বাঁধের পাড় ঘেঁষে যত্র-তত্র বালু উত্তোলন এবং উক্ত বাঁধের উপর দিয়া/বাঁধ কেটে রাস্তা তৈরী করে অবাধে ট্রাক চলাচলের বিরুদ্ধে মোকদ্দমা দায়ের প্রভৃতি।

এ্যাড. ইয়াহিয়া আইনজীবী হিসেবে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও মানিকগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতি থেকে সংবর্ধিত হয়েছেন। {অসমাপ্ত……/ বিস্তারিত প্রকাশিতব্য গ্রন্থ- ‘আলোকিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ’www.alokito-chapainawabganj.com (চাঁপাইনবাবগঞ্জের দু’শো বছর ইতিহাসের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সংক্ষিপ্ত জীবনী-১ম ও ২য় খণ্ড), লেখক- মাহবুবুল ইসলাম ইমন}