খবির উদ্দীন আহমেদ ওরফে কে.আহমেদ

উপমহাদেশের প্রখ্যাত রাজনীতিক-সমাজসেবী ও আইনজীবী, অবিভক্ত ভারতবর্ষের রেলমন্ত্রী- ‘ব্যারিস্টার খবির উদ্দীন আহমেদ ওরফে কে.আহমেদ’ ১৮৭৩ সালে তৎকালীন মালদহ জেলার (বর্তমান চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট ইউনিয়ন) বিশ্বনাথপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা সবুকতুল্লাহ মিঞা।
খবির উদ্দীন আহমেদ ১৮৯০ সালে মালদহ জেলা স্কুল থেকে এন্ট্রাস পাস করে বিলেতে গিয়ে প্রথমে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা নেন, এরপর তিনি Gray’s Inn থেকে Bar-at-Law সাফল্যের সাথে শেষ করে তৎকালীন Queen Victoria এর নির্দেশে Royal British Family এর Legal Adviser Panel এ নিযুক্ত হন। ১৯১০ সাল পরবর্তী সময়ে তৎকালীন ব্রিটিশ রয়্যাল ফ্যামিলির (ব্রিটিশ রাণীর) পারিবারিক আইনজীবী হওয়ার দুর্লভ সুযোগ হয়েছিল খবির উদ্দীন আহমেদের।
বিলেত থেকে তিনি দেশে ফিরে এসে অবিভক্ত ভারতবর্ষের মুসলিমদের নিয়ে নবগঠিত রাজনৈতিক দল All Indian Muslim League এর Founder Member হিসেবে যোগদান করেন এবং পরবর্তীতে All Indian Democratic Party প্রতিষ্ঠা করেন। তৎকালীন সময়ে তিনি বৃহত্তর রাজশাহী এবং মালদহের Muslim Representative নেতা ছিলেন।
ব্যারিস্টার খাবিরউদ্দীন আহমেদ অবিভক্ত বাংলার প্রথম মুসলমান ব্যারিস্টার ছিলেন। তিনি কোলকাতা হাইকোর্ট ও ফেডারাল কোর্ট, দিল্লিতে দীর্ঘ সময় ওকালতি করেছেন।
আইনজীবীর পাশাপাশি রাজনীতিবিদ ও সমাজসেবী হিসেবেও তাঁর সুনাম রয়েছে। ১৯১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত শতবর্ষী-ঐতিহ্যবাহী চাঁপাইনবাবগঞ্জের ‘কানসাট উচ্চ বিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠায় তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
খবির উদ্দীন আহমেদ ১৯১৯ থেকে ১৯৩৬ সাল পর্যন্ত নির্বাচিত Member of Legislative Assembly (MLA) ছিলেন। তৎকালীন মালদহ জেলা, নওগাঁর কিছু অংশ, জয়পুরহাট ও দিনাজপুরের কিছু অংশ নিয়ে ছিল তাঁর নির্বাচনী বিশাল এলাকা। তাঁর জনপ্রিয়তা এতোই বেশি ছিল যে, বারবার তিনি নির্বাচিত হতেন।
লর্ড লিননিথ গো (ভাইস রয়) এর সমসাময়িক ছিলেন ব্যারিস্টার খবির উদ্দীন আহমেদ। তাঁর শাসনামলে অবিভক্ত ভারতবর্ষের রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। রেলমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে অবিভক্ত বাংলা তথা সমগ্র ভারতবর্ষের রেলপথ উন্নয়ন ও সংস্কার কাজে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। অবিভক্ত বাংলার রেললাইন সংস্কার, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমনুরা জংশনের অবকাঠামাগত উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন, মালদহ টাউন রেল ষ্টেশনের অবকাঠামাগত উন্নয়ন ও আধুনিকায়নসহ তৎকালীন ভারতবর্ষের রেলযোগোযোগের উন্নতিকল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
ব্যারিস্টার খবির উদ্দীন আহমেদ ১৯৩৯ সালের ১০ মার্চ দিল্লীতে নিজ বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন। দিল্লীর মুসলিম গোরস্থানে তাঁর কবর রয়েছে। মৃত্যুর পর তৎকালীন বৃটিশ সরকার তাঁর সম্মানে দিল্লীর একটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা ‘ব্যারিস্টার কে আহমেদ স্ট্রীট’ নামকরণ করেন। {অসমাপ্ত……/ বিস্তারিত প্রকাশিতব্য গ্রন্থ- ‘আলোকিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ’www.alokito-chapainawabganj.com (চাঁপাইনবাবগঞ্জের দু’শো বছর ইতিহাসের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সংক্ষিপ্ত জীবনী-১ম ও ২য় খণ্ড), লেখক- মাহবুবুল ইসলাম ইমন}