সৈয়দ মনজুর হোসেন

খ্যাতিমান রাজনীতিক ও সমাজসেবী, সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত ‘সৈয়দ মনজুর হোসেন’ ১৯৪৩ সালের ১৬ নভেম্বর তৎকালীন মালদহ জেলার (চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও পশ্চিমবঙ্গ-ভারতের কিছু অংশ) কুট্টিটোলা এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা সৈয়দ সোলায়মান ১৯৬৩ সালে পরিবারসহ মালদহের কুট্টিটোলা এলাকা থেকে স্থানান্তর হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের কালীতলা মহল্লায় চলে আসেন। পরবর্তীতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের ইসলামপুর মহল্লায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে সৈয়দ মনজুর হোসেন ভোলাহাট ও শিবগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে (ন্যাপ-ভাসানী) যোগদান করেন। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত তিনি নবাবগঞ্জ মহকুমা (বর্তমানে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা) ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক এবং ন্যাপের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন।
প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নেতৃত্ব যখন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) গঠন হয়, তখন তিনি বিএনপিতে যোগদান করেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন নেতা সৈয়দ মনজুর হোসেন ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টের নবাবগঞ্জ মহকুমার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হোন। পরবর্তীতে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থ বিষয়ক সম্পাদক, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্যসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বিএনপির আহŸায়কের দায়িত্ব পালন করেন।
বর্ণাঢ্য ও সফল রাজনৈতিক জীবনে সৈয়দ মঞ্জুর হোসেন ১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে, বিএনপির মনোনিত ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ (নাচোল-ভোলাহাট-গোমস্তাপুর) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হোন। ১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ, ১৯৯৬ সালে ষষ্ঠ, পরবর্তীতে সপ্তম জাতীয় সংসদ এবং ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ মোট পাঁচবার তিনি সাংসদ নির্বাচিত হোন। ১৯৮১-৮২ সালে তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের (বিএনপি সরকার) সেচ ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে এবং পরে শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
শুধু রাজনীতিক নয়, সমাজসেবী হিসেবে সৈয়দ মনজুর হোসেনের সুনাম রয়েছে। ১৯৭৯ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত দীর্ঘদিন তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের সাংসদ ছিলেন। গোমস্তাপুর উপজেলার চৌডালা ব্রীজ, রহনপুরের মকরমপুর ব্রীজ, বংপুর থেকে আক্কেলপুর পর্যন্ত ডাবল লেন রাস্তা নির্মাণ, রহনপুর থেকে ভোলাহাট রাস্তা নির্মাণ প্রভৃতি তাঁর উল্লেখযোগ্য অবদান।
রহনপুর মহিলা কলেজ, ভোলাহাট মহিলা কলেজ, রাধাকান্ত বরেন্দ্র কলেজ, পি.এন কলেজ, নাচোল মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন সৈয়দ মনজুর হোসেন। নানামুখী সমাজসেবা এবং জনকল্যাণমূলক কাজের জন্য এলাকায় তিনি জনপ্রিয়তা লাভ করেন। সেই সময় তিনি হয়ে ওঠেন গোমস্তাপুর-ভোলাহাট-নাচোল তথা চাঁপাইনবাবগঞ্জের গণমানুষের নেতা। সৈয়দ মঞ্জুর হোসেনকে অনেকেই তখন মনজুর মাছি/মাছি মন্ত্রী হিসেবে জানতো।
জননন্দিত নেতা সৈয়দ মনজুর হোসেন ২০০৭ সালের ২৪ মার্চ মৃত্যুবরণ করেন। { অসমাপ্ত……/ বিস্তারিত প্রকাশিতব্য গ্রন্থ- ‘আলোকিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ’ (চাঁপাইনবাবগঞ্জের দু’শো বছর ইতিহাসের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সংক্ষিপ্ত জীবনী)}