বাংলাদেশের প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ, প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবী- প্রফেসর ড.মুহম্মদ সিরাজুল ইসলাম ১৯২৮ সালের ১ জানুয়ারীতে তৎকালীন মালদহ জেলার (চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও ভারতের কিছু অংশ) কালিয়াচকের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ইদ্রিশ আলী ছিলেন মালদহ জেলা স্বুলের প্রধান শিক্ষক। তিন ছেলে ও দুই মেয়ের জনক প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম বিয়ে করেছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরের সাকিনা সিরাজকে।
প্রফেসর ড.মুহম্মদ সিরাজুল ইসলাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় (ভিজিটিং প্রফেসর), সেন্ট্রাল কলকাতা কলেজ (বর্তমান মাওলানা আজাদ কলেজ), কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন অধ্যাপনা করেন। তিনি ১৯৮০ সালে জার্মান একাডেমিক এক্সচেঞ্জ সার্র্ভিস কর্তৃক, স্পন্সর পেয়ে বোন ইউনিভার্সিটি, জার্মাানি এর ভিজিটিং প্রফেসর নিযুক্ত হন এবং ১৯৮০-৮৪ সাল পর্যন্ত ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (মিট) এ আখাগান প্রোগ্রাম অন আর্কিটেকচারের আওতায় আখাগান ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম ১৯৫৩-৫৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের এডুকেশনাল ডিরেক্টর এ প্ল্যানিং এ্যাডভাইজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৫৫-৫৮ সালে প্রথমবার এবং ১৯৭৭-৭৯ সালে দ্বিতীয়বার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি’ বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৩-৭৫ সাল পর্যন্ত তিনি নিউদিল্লীস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশনে শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক কাউন্সিলর এবং ১৯৭৫-৭৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক (ডাইরেক্টর জেনারেল) হিসেবে সাফল্যের সাথে দায়িত্ব পালন করেন প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবি ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব- প্রফেসর ড.মুহম্মদ সিরাজুল ইসলাম ।
১৯৮৪-৮৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সদস্য এবং ১৯৮৮-৯১ সাল পর্যন্ত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালযের ভাইস চ্যান্সেলর পদে নিযুক্ত ছিলেন প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ- প্রফেসর ড.মুহম্মদ সিরাজুল ইসলাম। তিনি ১৯৮০ সালে হাভার্ড ও এমআইটতে ‘সাউথ এশিয়ান আর্কিটেকচার’ এর উপর ৫টি ব্ক্তৃতা করেন এবং একই বছর জর্দানের বাদশাহ হাসানের আমন্ত্রণে ইসলামিক আর্কিটেকচার বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। তিনি ১৯৯২ সালে ধর্ম ও সংস্কৃতির উপর জার্মানির বোন শহরে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন এবং ১৯৯৯ সালে ভারতের রাজধানী নিউ দিল্লীতে গ্লোবালাইজাইশেনর উপর আন্তর্জাতিক সেমনারে সভাপতিত্ব করেন। প্রফেসর সিরাজুল ইসলামের সম্পাদিত গ্রন্থলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল: 1.Art of Bangladesh: Zainul Abedin (1977), 2.Contemporary Art Series (1976-77) 3.The journal of Bangladesh Shilpakala Academy (1976-77) | তাঁর লিখিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে Pajistan & its Culture (1966) এবং Masjid-i-Jami(1976) অন্যতম। এছাড়া বিভিন্ন সমায়ীকিতে প্রকাশিত তাঁর অসংখ্য গবেষণামূলক প্রবন্ধ, জার্নাল রয়েছে।
তিনি বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা-সাধারণ সম্পাদক, পরবর্তীতে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ জার্মান এলামনাই এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি, বাংলা একাডেমি ও এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশসহ বিভিন্ন সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠ ছিলেন। প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী প্রফেসর ড.মুহম্মদ সিরাজুল ইসলাম ২০০৫ সালের ৮ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন। {অসমাপ্ত…/ বিস্তারিত প্রকাশিতব্য মূল গ্রন্থ- ‘আলোকিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ’ (চাঁপাইনবাবগঞ্জের দু’শো বছর ইতিহাসের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সংক্ষপ্তি জীবনী)}