লতিফুর রহমান

Share With

বিশিষ্ট রাজনীতিক-সমাজসেবী, দুই বারের সাবেক সংসদ সদস্য ও শিক্ষক ‘ মোহা. লতিফুর রহমান’ চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের নামোরাজারামপুর এলাকায় ১৯৫৫ সালের আগষ্ট মাসের ৩১ তারিখ জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতা  মো. ওয়াজেদ আলী এবং মাতা মরিয়ম। তিনি পিতামাতার একমাত্র সন্তান।

লতিফুর রহমান চাঁপাইনবাবগঞ্জের রাজারামপুর হামিদুল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৭২ সালে মাধ্যমিক এবং ১৯৭৪ সালে নবাবগঞ্জ সরকারী কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। ১৯৮১ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে বি.এ (সম্মান) এবং ১৯৮২ সালে এম.এ পাস করেন। ১৯৮৬ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামের ইতিহাস ও সংষ্কৃতি বিভাগে থেকে এম.এ পাস করে ডবল এম.এ ডিগ্রী অর্জন করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি আবারও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ রাজশাহী ল’কলেজ থেকে এলএলবি পাস করেন।

১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি কলেজ জীবনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন। পরবর্তী সময়ে তিনি ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরে যোগদান করেন। ১৯৭৮ সালে ইসলামী ছাত্রশিবির, নবাবগঞ্জ শহর শাখার সভাপতি নির্বাচিত হোন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে পরপর দুইবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবিরের সভাপতি, একবার সেক্রেটারী এবং সৈয়দ আমীর আলী হল শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন । ইসলামী ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের সদস্যও ছিলেন। ১৯৮৫ তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করেন এবং নবাবগঞ্জ শহর শাখার আমীর এর দায়িত্ব পালন করেন।

লতিফুর রহমান ১৯৮৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হিসেবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর-৩ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে অংশ হিসেবে ১৯৮৭ সালের ৫ ডিসেম্বর সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন। স্বৈরাচার বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন এবং ১৯৮৮ সালে কারাবরণ করেন। ১৯৮৯ সালে তিনি প্রথমবারের মত চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থেকে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে পূণরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সেইসময় তিনি একই সাথে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান এবং জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্যর দায়িত্ব পালন করেন। জাতীয় সংসদে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সংসদীয় দলের হুইপ হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন। তৎকালীন সরকারের পার্লামেন্ট এর পক্ষ থেকে ১৯৯৩ সালে আমেরিকা,কানাডা,জাপান,সৌদি আরব এবং ইংল্যান্ড সফর করেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহানন্দা ব্রীজ (ক্যাপ্টেন মহীউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতু), যা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া উদ্বোধন করেন। এছাড়াও চাঁপাইনবাবগঞ্জ পিটি আই স্থাপন, বিল্ডিং নির্মাণসহ চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন অবকাঠামাগত উন্নয়নে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। বর্তমানে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর ও কেন্দ্রীয় জামায়াতের সূরা সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

শুধু রাজনীতিক-সমাজসেবী নয়, শিক্ষক ও ব্যবসায়ী হিসেবেও তাঁর সুনাম রয়েছে। দীর্ঘদিন তিনি নবাবগঞ্জ সিটি কলেজের ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক হিসেবে শিক্ষকতা করেন। সুনাম ও সাফল্যের সাথে উক্ত কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এবং এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর হিসেবে ২০১৫ সালে অবসরগ্রহণ করেন ।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিএন্ডএফ এ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী লতিফুর রহমান। নবাবগঞ্জ ইকরা ট্রাষ্ট পরিচালিত ফুলকুঁড়ি ইসলামিক একাডেমি, মহিলা ফাযিল মাদ্রাসা ও হাজ্বী ইউনুস মোল্লা এতিম খানার সাথে যুক্ত রয়েছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহিপুর ডিগ্রী কলেজ ও বালুগ্রাম ডিগ্রী কলেজ এর তিনি প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি। বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি, বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি এবং নবাবগঞ্জ ক্লাব এর আজীবন সদস্য, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ইসলামী হাসপাতালের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, রাজারামপুর এহিয়াসুন্নত আলীম মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিসহ সম্পৃক্ত রয়েছেন বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানে।

তিনি ১৯৭৮ সালের ৮ মে আলহাজ্ব রিয়াজ উদ্দিনের কন্যা সাহেলা রহমানের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের চার কন্যা সন্তান রয়েছে । তিনি ৩ বার পবিত্র হজ্ব এবং একবার ওমরাহ হজ্ব পালন করেছেন। { অসমাপ্ত…/ বিস্তারিত প্রকাশিতব্য গ্রন্থ- ‘আলোকিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ’ www.alokito-chapainawabganj.com (চাঁপাইনবাবগঞ্জের দু’শো বছর ইতিহাসের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সংক্ষিপ্ত জীবনী ১ম ও ২য় খণ্ড) লেখক- মাহবুবুল ইসলাম ইমন}