মোজাম্মেল হক

মানুষ গড়ার কারিগর, আদর্শ শিক্ষক ও সমাজসেবী ‘মোজাম্মেল হক’ ১৯৪২ সালের ২৫ ডিসেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার রেহাইচর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মোবারক আলী ও মাতা রিজিয়া বেগম।
রেহাইচর, টিকরামপুরসহ চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিক্ষাবিস্তারে মোজাম্মেল হকের পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। মোজাম্মেল হকের দাদা প্রয়াত আলহাজ্ব মজিদুল্লাহ রেহাইচর এলাকার একজন স্বনামধন্য, সমাজসেবী ব্যক্তিত্ব। তিনি ১৯২০ সালে নির্মিত শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী ‘রেহাইচর প্রাথমিক বিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
মোজাম্মেল হক ১৯৬৪ সালে রাজশাহী জেলার তানোর উপজেলার মুন্ডুমালা উচ্চ বিদ্যালয়ে বিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী ‘নবাবগঞ্জ হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে’ বিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে একটানা ৩২ বছর সুনামের সাথে শিক্ষকতা করেন। ১৯৯৬ সালে তিনি শিবগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৯৮ সালে শিবগঞ্জ উপজেলার ‘শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক’ হিসেবে পদক লাভ করেন গুণি শিক্ষক মোজাম্মেল হক। পরবর্তীতে শিবগঞ্জবাসীর পক্ষ থেকে তিনি সফল প্রধান শিক্ষক হিসেবে শিবগঞ্জের ছত্রাজিতপুর কলেজ মাঠে সম্মাননাপ্রাপ্ত হোন। ২০০০ সালে তিনি চাকুরী হতে অবসরগ্রহণ করেন।
মানুষ গড়ার কারিগর ও আদর্শ শিক্ষক হিসেবে মোজাম্মেল হকের সুখ্যাতি রয়েছে। দীর্ঘ ৩৮ বছর শিক্ষকতার জীবনে বহু ছাত্র পড়িয়েছেন। যারা আজ জেলার কৃতি সন্তান এবং দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।
শুধু শিক্ষকতায় নয়, সমাজসেবী হিসেবেও তাঁর সুনাম রয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের নারী শিক্ষা বিস্তারে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন। সেই সময়ের গ্রামীণ ও অনাগ্রসর এলাকা চাঁপাইনবাবগঞ্জের রেহাইচর অঞ্চলে এলাকার মানুষদের নিয়ে, নিজ উদ্যোগে ১৯৮০ সালে ‘রেহাইচর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা করেন। ফলে এলাকার নারীরা অনেকেই এই স্কুলে পড়াশুনা করে আজ প্রতিষ্ঠার চরম শিখরে। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে একটানা ৩৫ বছর তিনি রেহাইচর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। নারী শিক্ষার পাশাপাশি সুইমিং, সাইক্লিং, গার্লস গাইড, জুনিয়র রেড ক্রস, কুংফু-কারাতে প্রভৃতি ট্রেনিং বিষয়ক এবং বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে নারীদের প্রতিনিয়ত উদ্বুদ্ধকরণসহ নানামুখী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রগতিশীল মানুষ হিসেবে তিনি সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব। দুই ছেলে ও দুই মেয়ের জনক মোজাম্মেল হকের সুযোগ্য সন্তান ডা. জামিল রায়হান, সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে কর্মরত রয়েছেন। এ্যানেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞ হিসেবে ডা. জামিল রায়হান (জন) ইতিমধ্যে সুনাম অর্জন করেছেন। {অসমাপ্ত… / বিস্তারিত প্রকাশিতব্য গ্রন্থ- ‘আলোকিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ’ (চাঁপাইনবাবগঞ্জের দু’শো বছর ইতিহাসের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সংক্ষিপ্ত জীবনী)}