মুসা মিঞা

সমাজসেবী ও চিকিৎসক ‘মুসা মিঞা’ ১৮৮৭ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের রাজারামপুর এলাকার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আলহাজ্ব জিয়ার উদ্দীন। শ্বশুর চাঁপাইনবাবগঞ্জের বালিয়াডাঙ্গানিবাসী ইব্রাহিম বিশ্বাস।

ডা. মুসা কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এলএমএফ (ক্যাম্বেল) ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯০৩ থেকে ১৯১০ সাল পর্যন্ত ছিল তাঁর শিক্ষাকাল। তখনকার সময়ে এলএমএফ পাস ডাক্তার ছিলো হাতে গোনা। ১৯১০ সালের পর থেকে মৃত্যুবধি তিনি চিকিৎসার মাধ্যমে জনসেবা ও এলাকার উন্নয়নে বিভিন্ন কাজে সম্পৃক্ত ছিলেন।

শিক্ষা বিস্তারসহ চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। ১৯১৭ সালে শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী- ‘রাজারামপুর হিত সাধন সমিতি ও পাঠাগার’ প্রতিষ্ঠায় তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী বটতলা হাট প্রতিষ্ঠায় তাঁর অবদান রয়েছে। রাজারামপুর গ্রামের মহিলা মাদ্রাসা (পরবর্তীতে রাজারামপুর হাসিনা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়) প্রতিষ্ঠায় তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
১৯২৮ সালে সমাজসেবী ‘ডা. মুসা’ নিজ উদ্যোগে পৈত্রিক বাগানে (পরবর্তীতে তাঁর ভগ্নিপতি পিয়ার বিশ্বাসের বাসস্থান) একটি সাপ্তাহিক হাট চালু করেন। তখনকার সময়ে এই গঞ্জ-হাট-বাজারগুলো ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতো। তৎকালীন জমিদার বাবু রামমোহন মল্লিক ও নায়েব দেবেন্দ্রনাথ রায় চৌধুরীর সহযোগিতায় ১৯২৯ সালের ১৭ এপ্রিল, মঙ্গলবার এই হাটটি বটতলায় স্থানান্তর করেন। সেই থেকে অদ্যাবধি এটি বটতলাহাট নামেই চালু আছে। বার্ষিক ২০০ টাকা খাজনার মিনিময়ে শুরু হয়ে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত টানা ১৬ বছর মুসা ডাক্তার এই বটতলা হাটের ইজারাদার ছিলেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের ‘রাজারামপুর পোস্ট অফিসটি’ বহু আগে থেকে বটতলাহাট সংলগ্ন কালীগঞ্জের বাবুপাড়ার জমিদার বাড়িতে ছিল। ১৯৪৭ পরবর্তী সময়ে ডা. মুসার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বাবুপাড়া হতে রাজারামপুর গ্রামে পোস্ট অফিসটি স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু ঘর সংকুলান না হওয়ায় তিনি নিজ বাড়িতেই পোস্ট অফিস চালু করেন এবং নিজেই পোস্ট মাস্টারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন। এভাবেই সমাজ উন্নয়নে নানামুখী অবদান রাখেন তিনি।

ডা. মুসা ১৯৪১ সালে উপর রাজারামপুরে ধুলু হাজির বাগানে ‘রাজারামপুর উচ্চ বিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে রাজারামপুরের বদিউজ্জামান বুদু মিয়া জমি ও ভবন নির্মাণের প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে ১৯৫৫ সালে তাঁর বাবার নামানুসারে উক্ত স্কুলটি ‘রাজারামপুর হামিদুল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়’ নামকরণ করেন এবং এই মর্মে ১৯৪৫ সালে একটি রেজুলেশনও তৈরি করেন। ১৯৫১ সালের ১৪ মার্চ সমাজসেবী ডা. মুসা মৃত্যুবরণ করেন। {অসমাপ্ত……/ বিস্তারিত প্রকাশিতব্য গ্রন্থ- ‘আলোকিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ’ www.alokito-chapainawabganj.com (চাঁপাইনবাবগঞ্জের দু’শো বছর ইতিহাসের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সংক্ষিপ্ত জীবনী-১ম ও ২য় খণ্ড) লেখক- মাহবুবুল ইসলাম ইমন}