বিশিষ্ট রাজনীতিক ও সমাজসেবী, চাঁপাইনবাবগঞ্জের দিয়াড় অঞ্চলের প্রাণপুরুষ ‘প্রয়াত নাসির উদ্দিন আহম্মেদ’ ১৯৩০ সালের ৭ জুন জন্মগ্রহণ করেন। পৈত্রিকনিবাস সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুরে হলেও ১৯৬২ সালের পর থেকে নাসির উদ্দিন চাকুরীসূত্রে এবং পরবর্তীতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের প্রয়াত সিদ্দিক হোসেনের কন্যা আনোয়ারা বেগমকে বিয়ে করে পরিবারসহ চাঁপাইনবাবগঞ্জে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের দিয়াড়ঞ্চল হিসেবে খ্যাত- ইসলামপুর, দেবীনগর, নারায়ণপুর, সুন্দরপুর প্রভৃতি ইউনয়নের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নাসির উদ্দিন আহম্মেদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। সমাজসেবা ও রাজনীতিতে সেই সময় তিনি দিয়াড় অঞ্চলের প্রাণপুরুষ হয়ে ওঠেন। ১৯৭৫ সাল থেকে বিভিন্ন মেয়াদে ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের পাঁচবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৯০ সালে তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হোন। ১৯৯৬ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনে আওয়ামীলীগ মনোনিত নৌকার প্রার্থী হিসেবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে নিকটতম প্রতিদ্বন্দি হোন।
ভাষাসৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও বর্ষিয়ান রাজনীতিক আ.আ.ম মেসবাহুল হক বাচ্চু ডাক্তারের হাত ধরে তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহকুমা আ.লীগের রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। ইসলামপুর ইউনিয়ন, আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। মৃত্যুবধি তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা আ.লীগের দীর্ঘদিন সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ ঘোষিত জেলা আ.লীগের সকল আন্দোলন, লড়াই-সংগ্রামে তিনি ছিলেন অগ্রসৈনিক।
জননন্দিত নেতা নাসির উদ্দিন আহম্মেদ মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে রিলিফ কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। শুধু রাজনীতিক নয়, সমাজসেবী হিসেবেও নাসির উদ্দিন আহম্মেদের সুনাম রয়েছে। ১৯৮৮ সালে নিজ উদ্যোগে, এলাকার মানুষদের নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের দেবীনগর ইউনিয়নে ‘দিয়াড় মহাবিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে উক্ত কলেজের প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের দেবীনগর দারুস সালাম দাখিল মাদ্রাসা, ইসলামপুরে ছয়রশিয়া নাসিরাবাদ হাট, ছয়রশিয়া নাসিরাবাদ ঈদগাহ, ছয়রশিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রভৃতিতে তিনি জমিদান করেন এবং সেগুলো প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। দিয়াড়ঞ্চলের মানুষদের কল্যাণে, যাতায়াতের সুবিধার্থে তৎকালীন সময়ে তিনি দিয়াড়ঞ্চল থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে যাতায়াতের জন্য খেয়াঘাট (বর্তমান শেখ হাসিনা সেতু সংলগ্ন এলাকায়) স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। খেয়াঘাট স্থাপনে জমিদানসহ গুরত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।
ইসলামপুর, দেবীনগর, নারায়ণপুর, সুন্দরপুরসহ চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের বিভিন্ন রাস্তাঘাট, কালভার্ট-ব্রীজ, স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মন্দির-মাদ্রাসা, ঈদগাহ, গোরস্থান প্রভৃতি নির্মাণ ও প্রতিষ্ঠায় তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। দিয়াড়ঞ্চলে প্রথম এবং একমাত্র পুলিশ ফাড়ি (থানা)- ‘ইসলামপুর তদন্ত কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠায় জমিদান করেন নাসির উদ্দিনের পরিবার। ‘ইসলামপুর তদন্ত কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন নাসির উদ্দিন আহম্মেদের সুযোগ্য সন্তান, বর্তমান ইসলাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আকতারুজ্জামান টিপু।
চার ছেলে ও দুই মেয়ের জনক নাসির উদ্দিনের আরেক সুযোগ্য সন্তান জিয়াউর রহমান তোতা চাঁপাইনবাবগঞ্জের অন্যতম সাবেক ছাত্রনেতা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত সাবেক ভাইস-চেয়ারম্যান। গণমানুষের নেতা আলহাজ্ব নাসির উদ্দিন আহম্মেদ ২০০৮ সালের ২৬ মার্চ মৃত্যুবরণ করেন। {অসমাপ্ত……/ বিস্তারিত প্রকাশিতব্য গ্রন্থ- ‘আলোকিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ’ (চাঁপাইনবাবগঞ্জের দু’শো বছর ইতিহাসের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সংক্ষিপ্ত জীবনী)