কৃষক-শ্রমিক-মজুর-সাধারণ মানুষের মধ্যমনি, বিশিষ্ট কৃষকনেতা, শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের অন্যতম সফল চেয়ারম্যান, সমাজসেবী- ‘একরামুল হক খুদি’ ১৯৩৭ সালের ১ জানুয়ারী চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট ইউনিয়নের শিবনারায়ণপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা প্রয়াত তৈয়ব আলী মাস্টার এবং মাতা প্রয়াত মোমেনা বেগম। দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি পিতা-মাতার জ্যোষ্ঠ সন্তান। একমাত্র ভাই ‘এনামুল হক বুদি (৭০)’ এখনো জীবিত রয়েছেন। একরামুল হক খুদি ১৯৬০ সালে গোদাগাড়ী কাকনহাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন, ১৯৬২ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট এবং ১৯৬৬ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সাথে অনার্স (ইতিহাস বিভাগ) ও মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। সেই সময়কার তুখোর ছাত্রনেতা ‘একরামুল হক খুদি’ ন্যাপ (ভাসানী) এর ছাত্র ইউনিয়নের মাধ্যমে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। ১৯৬২ সালে সামরিক শাষক আইউব খান বিরোধী আন্দোলনে ছাত্রনেতা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ঘৃণা প্রদর্শনের অংশ হিসেবে আইউব খানকে (রাজশাহী স্টেডিয়াম মাঠে) জুতা নিক্ষেপ করে সেই সময় ব্যাপক আলোচিত হন ছাত্রনেতা ‘একরামুল হক খুদি’।
১৯৭৭ সালে তিনি শিবগঞ্জের কানসাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান (দুইবার) নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ সালে শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন কৃষক-শ্রমিক-মজুর তথা সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের নেতা ‘একরামুল হক খুদি’। বড় রাজনীতিক দলের প্ল্যাটফর্ম ছাড়াই সাধারণ মানুষের কল্যাণে, দীর্ঘদিন স্বতন্ত্রভাবে রাজনীতি করে শিবগঞ্জের বিভিন্ন উন্নয়ন-সমাজমূলক কাজ করেছেন তিনি। শিবগঞ্জের কানসাট ডিগ্রী কলেজ, চাকলা মাদ্রাসা, কানসাটের বালুচর গ্রাম হতে মাঠের শেষ সীমানা পর্যন্ত (প্রত্যন্ত অঞ্চলে) কৃষকদের সুবিধার্থে প্রায় পাঁচ কি.মি. রাস্তা নির্মাণ, শিবগঞ্জের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট, মসজিদ-মন্দির প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কৃষক, শ্রমিক, মেহনতী মানুষের কল্যাণে সর্বদা নিয়োজিত থাকতেন বলে সেই সময় কৃষকনেতা হিসেবে তিনি ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেন। অত্যন্ত দু:সাহসীকতা আর জীবনের ঝুকি নিয়ে তিনি সাধারণ মানুষদের অধিকার আদায়ে লড়াই করেছেন সারাজীবন। এইজন্য বহুবার কারাবরণও করেছেন জনপ্রিয় কৃষকনেতা ‘একরামুল হক খুদি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ১৯৭৩ সালে এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) এর প্রার্থী হিসেবে ১৯৮৬ সালে সংসদ নির্বাচনে (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১) অংশগ্রহণ করে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন তিনি।
শুধু সমাজসেবা আর রাজনীতিই নয়, একজন ভালো সাংবাদিক হিসেবেও তাঁর খ্যাতি রয়েছে। একাত্তর পূর্ববর্তী সময়ে ঢাকা থেকে প্রকাশিত ‘ডেইলি মর্নিং নিউজ’ পত্রিকার (অধুনালুপ্ত) সাব-এডিটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ‘একরামুল হক খুদি’। ব্যক্তিগত জীবনে ছয় ছেলে ও তিন মেয়ের জনক তিনি। একরামুল হক খুদির সুযোগ্য সন্তান ‘সোমা ইসলাম’ চ্যানেল আই (টেলিভিশন) এর সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার এবং ‘সার্জেন হক বিপ্লব’ বর্তমানে আমেরিকায় কম্পিউটার প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। বিশিষ্ট কৃষকনেতা, সমাজসেবী, সাংবাদিক ‘একরামুল হক খুদি’ ১৯৯১ সালের ২৩ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। { অসমাপ্ত…/বিস্তারিত প্রকাশিতব্য মূল গ্রন্থ- ‘আলোকিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ’ (চাঁপাইনবাবগঞ্জের দু’শো বছর ইতিহাসের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সংক্ষপ্তি জীবনী}