আবুল কাশেম

বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ, গবেষক ও লেখক- ‘অধ্যাপক ড. মো. আবুল কাশেম’ ১৯৬০ সালের ৩১ জানুয়ারী চাঁপাইনবাবগঞ্জের নয়াগোলা এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মো. আলতাফ হোসেন এবং মাতা আমেনা খাতুন।
মেধাবী ছাত্র আবুল কাশেম ১৯৭৬ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় প্রথম বিভাগে এস.এস.সি এবং ১৯৭৮ সালে নবাবগঞ্জ কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে এইচ.এস.সি পাস করেন। উল্লেখ্য, তিনি এইচ.এস. সি পরীক্ষায় রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে মানবিক বিভাগে চতুর্থ স্থান অধিকার করেন।
১৯৮১ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতক (উচ্চতর দ্বিতীয় শ্রেণীতে প্রথম), ১৯৮২ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর (প্রথম শ্রেণীতে প্রথম) ডিগ্রী অর্জন করেন। পরবর্তীতে ১৯৯২ সালে ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে পি-এইচ.ডি ডিগ্রী অর্জন করেন। তাঁর পি-এইচ.ডি থিসিসের বিষয় ছিল ‘পূর্ব বাংলা ও পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্র আন্দোলনের (১৯৪৭-১৯৬৯) ইতিহাস’। পি-এইচ.ডি গবেষণাকর্মের জন্য তিনি ভারত সরকারের বৃত্তি অর্জন করেন। ভারতের বিখ্যাত ইতিহাসবিদ ড. অমলেন্দু দে তাঁর পি-এইচ. ডির তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন।
কর্মজীবনে ড. আবুল কাশেম ষষ্ঠ বিসিএস কোয়ালিফাই করে ১৯৮৬ সাল আ্যাডমিন ক্যাডারে সহকারী কমিশনার হিসেবে যোগদান করে সাড়ে ছয় মাস সরকারী চাকুরি করেন। কিন্তু তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগদানের আমন্ত্রণ পেলে সরকারের আ্যাডমিন ক্যাডারে ইস্তফা দিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে যোগদান করেন। মূলত শিক্ষকতাকে তিনি পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন।
ড. কাশেম ১৯৮৬ সালের জুলাই মাসে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে সহকারী অধ্যাপক (১৯৮৯) সহযোগী অধ্যাপক (১৯৯৪) ও অধ্যাপক (২০০০) পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ২০১৩ থেকে তিনি অধ্যাপক গ্রেড-১ হিসেবে কর্মরত আছেন।
অধ্যাপক আবুল কাশেমের তত্ত্বাবধানে এখন পর্যন্ত ৯জন গবেষক পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেছেন। ২জন গবেষক এমফিল ডিগ্রী পেয়েছেন তাঁর অধীনে। এই সকল থিসিসের প্রায় সবগুলোই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংক্রান্ত।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী প্রগতিশীল ব্যক্তিত্ব ও বুদ্ধিজীবী হিসেবে দেশব্যাপি পরিচিত অধ্যাপক ড. আবুল কাশেম। আলোচক ও অসাধারণ বাগ্মী হিসেবে তাঁর সুনাম রয়েছে। ‘মুক্তির পরম্পরা: বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের প্রেক্ষাপট ও প্রস্তুতিপর্ব (২০২০), বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম ও আওয়ামীলীগ: ঐতিহাসিক দলিল (২০০১), মুক্তিসংগ্রামে আওয়ামী লীগঃ দালিলিক ইতিহাস (২০২১) A Fiery Force : Student Politics and the Making of Bangladesh (২০২১) তাঁর প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। এছাড়াও বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর প্রকাশিত গবেষণামূলক প্রবন্ধের সংখ্যা প্রায় অর্ধ-শতাধিক।
তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সভাপতি (২০১১-২০১৪), আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি (২০১৪-২০১৭), শহীদ হবিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ (২০০০-২০০৩), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক (১৯৯৪) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস এ্যালামনাই এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক (২০১১-২০১৪)সহ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের স্টিয়ারিং কমিটির বেশ কয়েকবার নির্বাচিত সদস্য ছিলেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচিত সিনেট সদস্য (১৯৯৮-২০০৪) এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মনোনীত শিক্ষা পরিষদের সদস্য ছিলেন (২০০৯-২০১৩)।
বর্তমানে তিনি শিক্ষাবিদ হিসেবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য, ইউজিসির প্রতিনিধি হিসেবে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মনোনীত শিক্ষা পরিষদের সদস্য এবং চ্যান্সেলর মনোনীত পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা পরিষদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বাংলাদেশ ইতিহাস সমিতির সহ-সভাপতি ও বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির সদস্য।
শিক্ষকতা ও গবেষণার পাশাপাশি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রগতিশীল রাজনীতির সাথে তিনি সম্পৃক্ত। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শিক্ষা ও মানব সম্পদ উপ-কমিটির সদস্য, রাজশাহী জেলা বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এবং বঙ্গবন্ধু পরিষদ কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
অধ্যাপক আবুল কাশেম চাঁপাইনবাবগঞ্জের বালুগ্রাম আদর্শ ডিগ্রী কলেজের গভর্নিং বডির সাবেক সভাপতি, বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য, বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সমিতির আজীবন সদস্য, পশ্চিমবঙ্গ ইতিহাস সংসদের আজীবন সদস্য, রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের সাবেক সদস্য, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আর্কাইভস (ঢাকা) উপদেষ্টা পরিষদের সাবেক সদস্যসহ দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পালন করেছেন। {অসমাপ্ত……/ বিস্তারিত প্রকাশিতব্য গ্রন্থ- ‘আলোকিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ’ www.alokito-chapainawabganj.com (চাঁপাইনবাবগঞ্জের দু’শো বছর ইতিহাসের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সংক্ষিপ্ত জীবনী)}