বিশিষ্ট চিকিৎসক-সমাজসেবী, রাজশাহী মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিভেন্টিভ ও সোসাল মেডিসিন অনুষদের প্রতিষ্ঠাতা-ডীন এবং রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান- ‘প্রফেসর ডা. মোহা. জাওয়াদুল হক’ ১৯৬১ সালের ১৬ নভেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের রাজারামপুর এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন।
তিনি কৃতী পরিবারের সন্তান। তাঁর পিতা ক্বারী মাওলানা ইসারুল হক ছিলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় সমাজসেবী ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব।
জাওয়াদুল হক ১৯৭৬ সালে রাজারামপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি পরীক্ষায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে বৃত্তিসহ প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হোন। নবাবগঞ্জ কলেজ থেকে ১৯৭৮ সালে বৃত্তিসহ প্রথম বিভাগে এইচ.এস.সি পাস করেন। ১৯৮৫ সালে তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে এম.বি.বি.এস ডিগ্রী লাভ করেন। পরবর্তী সময়ে ১৯৯২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব প্রিভেন্টিভ এন্ড সোসাল মেডিসিন (নিপসম) থেকে কমিউনিটি মেডিসিন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা (এমপিএইচ) এবং ১৯৯৮ সালে এমফিল (প্রিভেন্টিভ এন্ড সোস্যাল মেডিসিন) ডিগ্রী অর্জন করেন। অত:পর ২০০৮ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ইন্সটিটিউট অব এনভ্যারনমেন্টাল সাইন্স থেকে কমিউনিটি মেডিসিন (পাবলিক হেলথ্) বিষয়ে পি.এইচ.ডি ডিগ্রী লাভ করেন।
১৯৮৬-১৯৯৩ সাল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিকেল অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৩ সালের ১০ই মে রংপুর মেডিকেল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগে প্রভাষক হিসেবে মেডিকেল কলেজে শিক্ষকতার জীবন শুরু করেন। ২০০৪ সালের ৩০শে ডিসেম্বর তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। ২০০৮ সালের ৩ এপ্রিল পদোন্নতি নিয়ে তিনি দিনাজপুর মেডিকেল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন এবং ২০১০ সালের ১ এপ্রিল একই মেডিকেল কলেজে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত হন। ২০১০ সালের ৪ নভেম্বর রাজশাহী মেডিকেল কলেজে বদলী এবং কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব ছাড়াও রাজশাহী মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা শিক্ষা ও গবেষণা কাজের মান উন্নয়নে তিনি সর্বদা সচেষ্ট থেকেছেন।
প্রফেসর (ডা.) মোহা. জাওয়াদুল হক বর্তমানে রাজশাহী মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিভেন্টিভ ও সোসাল মেডিসিন অনুষদের প্রতিষ্ঠাতা-ডীন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে রাজশাহী মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন করছেন। রাজশাহী মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনায় তাঁর অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে। রাজশাহী মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসা, শিক্ষা ও পরীক্ষার যাবতীয় কার্যক্রম, গবেষণাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। তিনি ২০২০ সালের ১৫ই নভেম্বর রাজশাহী মেডিকেল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধানের পদ থেকে পিআরএল-এ গমন করেন। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার চিকিৎসা, শিক্ষা ও গবেষণা ক্ষেত্রে তাঁর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে ২০২১ সালের ১১ জানুয়ারী তাঁকে পূনরায় একই পদে এবং একই মর্যাদায় দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রদান করে। ফলে বর্তমানে তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধানের দায়িত পালন করছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনক্রমে রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন মেডিকেল জার্নালে এ পর্যন্ত তাঁর ৬৬টি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে, যার মধ্যে অধিকাংশই চিকিৎসা বিজ্ঞান বিষয়ে মৌলিক গবেষণা।
শিক্ষকতা ও চিকিৎসার পাশাপাশি তিনি রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন শিক্ষা, গবেষণা, সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত রয়েছেন। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ অন্ধ কল্যাণ সমিতির আজীবন সদস্য, বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন, রাজশাহী এবং রাজশাহী মেডিকেল কলেজ শিক্ষক সমিতির আজীবন সদস্য। তিনি রাজশাহীর প্রথম বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়- বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে পাবলিক হেলথ্ বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন এবং পাবলিক হেলথ্ বিভাগে মাস্টারস অব পাবলিক হেলথ্ (এমপিএইচ) কোর্স চালু করেন। তিনি এ বিশ্ববিদ্যালয়ে এমপিএইচ প্রোগ্রামের প্রতিষ্ঠাকাল থেকে অদ্যবধি সম্মানী কোর্স কোঅডিনেটরের দায়িত্ব পালন করছেন।
দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি তাঁর মমত্ববোধ-প্রচন্ড টান রয়েছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজে চাঁপাইনবাবগঞ্জ মেডিকেল সমিতির সভাপতি (দুইবার) হিসেবে তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আগত রোগীদের এবং অধ্যয়নরত ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন সহযোগীতাসহ চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষের দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন প্রকার সহযোগিতা করছেন। কিডনি বিকল রোগীদের চিকিৎসার আস্থার স্থল হিসেবে পরিচিত রাজশাহীর ‘ইমদাদ-সিতারা খান কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টার’ প্রতিষ্ঠায় তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন এবং প্রতিষ্ঠাকাল থেকে অদ্যবধি পরিচালনা বোর্ডের নির্বাহী সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। পাশাপাশি নতুন ধারার গবেষণাধর্মী-সেবামূলক প্রতিষ্ঠান ‘আলোকিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ ফাউন্ডেশন’ এর ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। {অসমাপ্ত……/ বিস্তারিত প্রকাশিতব্য গ্রন্থ- ‘আলোকিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ’ www.alokito-chapainawabganj.com (চাঁপাইনবাবগঞ্জের দু’শো বছর ইতিহাসের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সংক্ষিপ্ত জীবনী ১ম ও ২য় খণ্ড) লেখক- মাহবুবুল ইসলাম ইমন}