রাজশাহীর তথা উত্তরবঙ্গের সাহিত্যাঙ্গণে ‘আলোকিত নারী’ খ্যাত বিশিষ্ট সাহিত্যিক, সমাজসেবী ও রাজনীতিক- লুৎফুন নেসা মুস্তারী ১৯৪৪ সালের ২৩শে ডিসেম্বর তৎকালীন মালদহ জেলার (চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও ভারতের কিছু অংশ) কালিয়াচক থানার কুন্ডিরা গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৭-দেশ বিভাগ পরবর্তী সময়ে পরিবারসহ চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের ইসলামপুর মহল্লায় স্থায়ীভাবে চলে আসেন লুৎফুন নেসার পিতা কশিমুদ্দিন আহমেদ। বিশিষ্ট সমাজসেবী- কশিমুদ্দিন আহমেদ’ তৎকালীন ইউনিয়ন পরিষদের প্রেসিডেন্ট, নবাবগঞ্জ আলিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠাতা-সেক্রেটারী, নবাবগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের সেক্রেটারী, সোনা মসজিদ-তোয়াহাখানা মাদ্রাসা মসজিদের সেক্রেটারীসহ বহু মসজিদের সেক্রেটারীর দায়িত্ব পালন করেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিশিষ্ট রাজনীতিক ও আইনজীবি- এ্যাডভোকেট এ.এফ.এম সুলতানুল ইসলাম মনি হলেন লুৎফুন নেসা মুস্তারীর মেজো ভাই। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ শাখার প্রতিষ্ঠাতা- এ্যাডভোকেট সুলতানুল ইসলাম মনি পরবর্তীতে জেলা বি.এন.পির শীর্ষ পর্যায়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁর আরেক ভাই `শরিফুল ইসলাম বাবলা’ একজন উর্দ্ধতন ব্যাংক কর্মকর্তা (সাবেক অতিরিক্ত ম্যানেজিং ডিরেক্টর, ন্যাশনাল ব্যাংক, ঢাকা)। ছাত্র ইউনিয়নের চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রথম সভানেত্রী ছিলেন লুৎফন নেসা মুস্তারী। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি কলেজে তিনি প্রথম সরাসরি ভোটে নির্বাচিত ‘ছাত্রী কমনরুমের সেক্রেটারী’ (ছাত্র ইউনিয়নের প্যানেল থেকে)। ১৯৯১ এবং ১৯৯৬ সালে সংরতি মহিলা আসন-৬ এর (রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ) জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বিশিষ্ট রাজনীতিক ও সমাজসেবী- লুৎফন নেসা মুস্তারী।
দীর্ঘ ২১ বছর কলেজে শিকতা করে ২০০৬ সালে গোদাগাড়ী ডিগ্রী কলেজ থেকে অবসর গ্রহণ করেন অধ্যাপক লুৎফুন নেসা মুস্তারী। সারা জীবন শিা-বিশেষত নারী শিা ও উন্নয়ন কাজে সম্পৃক্ত থেকেছেন নারী জাগরণের অগ্রদূত, সমাজসেবী- লুৎফুন নেসা মুস্তারী। তিনি একাধিকবার রাজশাহী মাদার বখ্শ গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন এবং কলেজটিকে একটি গাহর্স্থ্য আদর্শ অর্থনীতি কলেজে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এখানে উলেখ এই কলেজের পি.সি.পি দেখে ‘একনেকে’ তাঁরই চেষ্টার ফলে পাশ হয় এবং পরিকল্পনা গৃহিত হয় যে, বাংলাদেশ প্রত্যেকটি বিভাগে একটি করে গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ মেয়েদের জন্য অত্যাবশ্যক। এরপর রাজশাহীসহ দেশের প্রতিটি বিভাগে গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ প্রতিষ্টিত হয়। তারই একান্ত চেষ্ঠা ও শ্রমের ফলে এই কলেজ উন্নয়ন বাজেটে ৮কোটি ৯৮ ল টাকা বরাদ্দ পায়। এই অর্থ দিয়েই এই কলেজ ভবন গার্হস্থ্য অর্থনীতির প্রয়োজনীয়তা জিনিসপত্র ল্যাব দিয়ে সুসজ্জিত সম্পূর্ণ হয়ে রাজশাহী নগরে পদ্মা আবাসিক এলাকায় মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে। এটি উত্তরবঙ্গের একমাত্র গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শাহ্ নেয়ামতুলাহ কলেজের প্রশাসনিক ভবনও তাঁরাই অনুকূলে নির্মিত হয়েছে। এই কলেজেও তিন গভর্নিংবডির দায়িত্ব পালন করেন পাঁচ বছর।
বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ-রাজশাহী থেকে ২০১৪ সালে প্রকাশিত ‘রাজশাহীর সাহিত্যাঙ্গণে-আলোকিত নারী’ গ্রন্থে খ্যাতিমান সাহিত্যিক- লুৎফুন নেসার বর্ণ্যাঢ্য জীবনী লিপিবদ্ধ হয়েছে। তাঁর প্রথম গল্পের নাম ‘জীবন’। দৈনিক যুগান্তর, দৈনিক সমকাল, দৈনিক দিনকাল, যায়যায় দিন, রাজশাহীর- দৈনিক সোনালী সংবাদ, নতুন প্রভাত, দৈনিক সানশাইনসহ জাতীয়-স্থানীয় বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তাঁর সৃজনশীল লেখা প্রকাশিত হয়েছে। রাজশাহীতে প্রকাশনা উৎসবে দণিার জানালা, এক নদী প্রেমসহ বেশ কয়েকটি গ্রন্থের ভুয়সী প্রশংসা করেছেন বিদগ্ধ গুণীজনেরা। বর্তমানে তিনি রাজশাহী বনলতা সাহিত্য পরিষদের সহ-সভাপতি. রাজশাহী সাহিত্য পরিষদের সদস্যসহ বিভিন্ন সাহিত্য-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে জড়িত। তিনি ১৯৯১ সালে ভারতের দিল্লিতে অনুষ্ঠিত সাতদিন ব্যাপী আর্ন্তজাতিক সেমিনারে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি হয়ে অংশগ্রহণ এবং সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
অধ্যাপনা, রাজনীতি, সাহিত্য ছাড়াও বিভিন্ন সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠনের সাথে জড়িত তিনি। রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান- ‘রাজশাহী এ্যাসোসিয়েশনের’ গর্ভনিংবডির সাবেক সদস্য ও বর্তমান কমিটিতে মহিলা সম্পাদিকার দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। ‘রাজশাহী জেলা মহিলা ক্রীড়া’ সংস্থার সহ-সভাপতি ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহিলা সংস্থার দীর্ঘদিন সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন বিশিষ্ট সংগঠক- লুৎফুন নেসা মুস্তারী। {অসমাপ্ত…/ বিস্তারিত প্রকাশিতব্য মূল গ্রন্থ- ‘আলোকিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ’ (চাঁপাইনবাবগঞ্জের দু’শো বছর ইতিহাসের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সংক্ষপ্তি জীবনী)}