বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক ও সমাজসেবী ‘শফিকুল আলম ভোতা’ ১৯৫১ সালের ১৬ই অক্টোবর চাঁপাইনবাবগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা প্রয়াত আইনাল হক ও মাতা প্রয়াত মাজেদা খাতুন। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে তিনি ভালো ফুটবল ও হকি খেলতেন। ক্রীড়া সংগঠক হিসেবেও তাঁর সুনাম রয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক (দুইবার) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ পুরানো স্টেডিয়ামে পুলিশ কাপ ফুটবল, জাতীয় যুব ফুটবলসহ বেশ কয়েকটি স্মরণকালের বড় ক্রীড়া ইভেন্টের আয়োজন করেন।
শুধু ক্রীড়া সংগঠক নয়, সমাজসেবী হিসেবেও শফিকুল আলম ভোতার খ্যাতি রয়েছে। এলাকার মানুষদের নিয়ে, নিজ উদ্যোগে ১৯৯৬ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকায় চরমোহনপুর-টিকরামপুর এলাকায় ‘চরমোহনপুর উচ্চ বিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে অদ্যাবধি তিনি চরমোহনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। পরবর্তীতে ২০১০ সালে তিনি এলাকার মানুষদের নিয়ে চরমোহনপুর দক্ষিণপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।
১৯৯৫ থেকে ১৯৯৯৮ সালের বিভিন্ন সময়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকা পদ্মা নদীর ভয়াবহ ভাঙনে নদী গর্ভে বিলীন হয়। ১৯৯৯ সালে পাঁকা, নারায়ণপুর, উজিরপুর এবং সুন্দরপুর ইউনিয়ন প্রায় সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে পড়লে পুরো ‘নবাবগঞ্জ জেলা’ হুমকির মুখে পড়ে। তৎকালীন ঢাকাস্থ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সমিতির উদ্যোগে, চাঁপাইনবাবগঞ্জে (১৯৯৯ সালের শেষের দিকে) ‘নবাবগঞ্জ জেলা নদী ভাঙন প্রতিরোধ সংগ্রাম কমিটি’ গঠিত হয়। ‘নবাবগঞ্জ জেলা নদী ভাঙন প্রতিরোধ সংগ্রাম কমিটির’ আহবায়ক ছিলেন শফিকুল আলম ভোতা। কমিটির যুগ্ম আহŸায়ক ছিলেন অধ্যক্ষ সাইদুর রহমান, এনামুল হক আলম (উজিরপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান), প্রকৌশলী মাহতাব উদ্দিন প্রমুখ। এছাড়াও এই আন্দোলনে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃতি সন্তান-বিচারপতি এমদাদুল হক, অব.সচিব ফজলুল হক, ভাষাসৈনিক এ্যাড.ওসমান গণি, প্রকৌশলী খাদেমুল ইসলাম ফিকসনের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। মূলত সংগ্রাম কমিটির ব্যাপক আন্দোলন-মুভমেন্টের ফলে তৎকালীন আওয়ামীলীগ সরকার পদ্মা নদীর বামতীর সংরক্ষণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ফলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মানুষ এবং জেলাটি নদী গর্ভে বিলীন হওয়া থেকে বেঁচে যায়।
১৯৮৪ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত আমাদের এই জেলার সরকারি গেজেটেড নাম ছিল ‘নবাবগঞ্জ জেলা’। ফলে প্রয়োজন দেখা দেয় নাম পরিবর্তনের। ১৯৯৯ সালের ৭ মার্চ ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা নামকরণ বাস্তবায়ন কমিটি’ গঠিত হয়। শফিকুল আলম ভোতাকে আহ্বায়ক ও এ্যাড. আবু হাসিবকে সদস্য সচিব করে ১১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন সমাজসেবী মজিবুর রহমান সোনা, প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম সেন্টু, ইসরাইল সেন্টু, আনোয়ার হোসেন দিলু প্রমুখ। সমন্বয়কারীর দায়িত্বে ছিলেন ঢাকাস্থ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী খাদেমুল ইসলাম ফিকসন। এই কমিটির আন্দোলনের ফলে পরবর্তীতে ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা’ গেজেটেড হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সাধারণ পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক (চারবার) হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন সময়ে পাঠাগার চত্বরে ফুল বাগান, বই সংরক্ষণের জন্য স্টিল র্যাক নির্মাণ প্রভৃতি তাঁর উল্লেখযোগ্য অবদান।
‘চাঁপাইনবাবগঞ্জের দু’শো বছর ইতিহাসের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সংক্ষিপ্ত জীবনী-আলোকিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ’ ব্যতিক্রমী প্রকাশনাকে সহযোগিতা প্রদানে ২০১৪ সালে গঠিত ‘আলোকিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ কেন্দ্রীয় পরিষদের (বর্তমানে বিলুপ্ত)’ তিনি আহবায়কের দায়িত্ব পালন করেন। আলোকিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ কেন্দ্রীয় পরিষদের সদস্য সচিব ছিলেন ‘আলোকিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ’ এর প্রতিষ্ঠাতা ও লেখক মাহবুবুল ইসলাম ইমন।
ডায়াবেটিক হাসপাতালের আজীবন সদস্য, চক্ষু হাসপাতালের আজীবন সদস্য, কিডনি ফাউন্ডেশনের আজীবন সদস্য, হার্ট ফাউন্ডেশনের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালনসহ নিরাপদ সড়ক চাই, আব্দুল মান্নান সেন্টু স্মৃতি সংসদ, শিশু শিক্ষা নিকেতন, জাগো নারী বহ্নিশিখা প্রভৃতি চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান/সংগঠন প্রতিষ্ঠা-পরিচালনায় শফিকুল আলম ভোতার অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে।
ছাত্রজীবনে তিনি ছাত্র ইউনিয়নের প্রগতিশীল রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। ১৯৮৩ সালে তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ওয়ার্কাস পার্টির আহŸায়কের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে সরাসরি রাজনীতি না করলেও যে কোন প্রগতিশীল, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের আন্দোলন-সংগ্রামে ছিলেন অগ্রসৈনিক। { অসমাপ্ত……/ বিস্তারিত প্রকাশিতব্য গ্রন্থ- ‘আলোকিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ’ (চাঁপাইনবাবগঞ্জের দু’শো বছর ইতিহাসের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সংক্ষিপ্ত জীবনী)}