বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও গণিত বিশারদ ‘প্রফেসর ড. রশিদুল হক’ ১৯৩২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জের নামোশঙ্করবাটি এলাকার মন্ডলপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মৌলভী মো.এমাজউদ্দিন ও মাতা এফ্রাতুন নেসা। মুক্তিযুদ্ধের শহীদ বুদ্ধিজীবী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা-ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর মনিমুল হক এবং মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক সেরাজুল হক শনি মিঞার (চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার স্বাধীনতা উত্তর প্রথম চেয়ারম্যান) তিনি ছোট ভাই ।
লেখাপড়ায় অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন রশিদুল হক। ১৯৪৭ সালে ম্যাট্টিকুলেশন পরীক্ষায় মালদহ জেলা স্কুলে প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করেন। ১৯৪৯ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় রাজশাহী সরকারি কলেজ হতে সম্মিলিত মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। ১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকারসহ গণিতে অনার্সসহ বি.এসসি. ডিগ্রি অর্জন করেন। পূর্বের সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপ্তির রেকর্ড ভঙ্গ করায় তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্বর্ণ পদকে ভূষিত করে। ১৯৫৩ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় হতে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকারসহ গণিতে এম.এসসি. ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫৬ সালে যুক্তরাজ্যের ম্যানচেষ্টার বিশ্ববিদ্যালয় হতে এম.এসসি. (রিসার্চ) ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি ১৯৬৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ অরিলিন্সের তুলেন বিশ্ববিদ্যালয় হতে পিএইচ.ডি. অর্জন করেন।
১৯৫৪ সালে ঢাকার জগন্নাথ কলেজে, ১৯৫৭ হতে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত রাজশাহী বিশ্বদ্যিালয়ে গণিতের অধ্যাপক এবং ১৯৬৪ হতে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত রিডার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এর মধ্যেই তিনি পিএইচ.ডি. অর্জনকালীন ১৯৬১-৬২ সালে নিউ অরলিন্স এর ডিলার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১৯৬২-৬৩ সালে লুইজিয়ানা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ইন্সট্রাক্টর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি ১৯৬৮ হতে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত রিডার এবং ১৯৭০ হতে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত গণিতের অধ্যাপক হিসেবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরি করেন। ১৯৭৪ হতে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত লিবিয়ার ত্রিপলির আল ফাতাহ বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৯০ হতে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত পুনরায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১৯৯৬ সাল হতে ২০০০ সাল পর্যন্ত ঢাকার এশিয়া-প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন।
একজন সফল শিক্ষক ও গণিত বিশারদ হিসেবে তাঁর সুনাম রয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৬৮-১৯৭৩ সাল পর্যন্ত গণিত বিভাগের প্রধান এবং ১৯৭০-৭১ সাল পর্যন্ত ‘বিজ্ঞান অনুষদের’ ডীনের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি কমনওয়েলথ বিশ্ববিদ্যালয়কমিশন কর্তৃক ফেলোশীপ প্রাপ্ত হয়ে ১৯৭৩-৭৪ সালে যুক্তরাজ্যের ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ভিজিটিং ফেলো’ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি ১৯৯৬-৯৭ সালে প্রফেসর শামসুল হকের নেতৃত্বাধীন শিক্ষা কমিশনের অন্যতম সদস্য ছিলেন।
অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল ব্যক্তিত্ব হিসেবে তাঁর পরিচিতি রয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সাধারণ পাঠাগারে ৭ হাজার বই দানসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক কাজের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা থেকে ২০০৩ সালে গুণি এই ব্যক্তিকে ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা শতবর্ষ পূর্তি উৎসব সম্মাননা’ প্রদান করা হয়। ২০২১ সালের ২১ মে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। {অসমাপ্ত……/ বিস্তারিত প্রকাশিতব্য গ্রন্থ- ‘আলোকিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ’ www.alokito-chapainawabganj.com (চাঁপাইনবাবগঞ্জের দু’শো বছর ইতিহাসের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সংক্ষিপ্ত জীবনী-১ম ও ২য় খণ্ড), লেখক- মাহবুবুল ইসলাম ইমন}