রকিবুদ্দিন

কিংবদন্তি গম্ভীরা শিল্পী ‘রকিবুদ্দিন’। বাংলাদেশের গম্ভীরা গানের জনপ্রিয় শিল্পী (নাতি) ‘রকিবুদ্দিন’ তৎকালীন মালদহ জেলার (চাঁপাইনবাবগঞ্জ তখন মালদহ জেলার মহকুমা ছিল) ফুলবাড়ি গ্রামে ১৯৪২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশ-বিভাগের পর তাঁর পিতা সাবের আলী পরিবার নিয়ে মালদহ থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের বাসুনিয়াপট্টি এলাকায় স্থায়ীভাবে চলে আসেন।

আধুনিক গম্ভীরা গানের রুপকার, কিংবদন্তি গম্ভীরা শিল্পী ‘ওস্তাদ শেখ সফিউর রহমান ওরফে সুফি মাস্টার (চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর নিবাসী) এর গম্ভীরা দলে দোহারী হিসেবে যুক্ত ছিলেন সাবের আলী। পিতার অনুপ্রেরণা ‘রকিবুদ্দিনকে’ গম্ভীরা গানে অনুরক্ত করে। মূলত উত্তারাধিকার সূত্রে তাঁর রক্তে মিশে আছে গম্ভীরা গান। চাঁপাইনবাবগঞ্জ হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ছাত্রাবস্থায় রকিব বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৫৪-১৯৭০ সাল পর্যন্ত তৎকালীন চাঁপাইনবাগঞ্জের সংগীতের বিখ্যাত ওস্তাদ ‘ক্ষিরোদ লাল রায়ের’ কাছে রাগ প্রধান গান, খেয়াল, ঠুমরি প্রভৃতি বিষয়ে তালিম নেন। নবাবগঞ্জ আর্ট কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন, নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয়ও করতেন। ‘রকিবুদ্দিন’ বিয়ে করেছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে তাঁর স্টেশনারীর দোকান ছিল, সেটি মুক্তিযুদ্ধের সময় লুটপাট হয়।
মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময় থেকে রকিব গম্ভীরা গানের দিকে ঝুঁকে পড়েন। কুতুবুল আলমসহ ৮-১০ জনকে নিয়ে গম্ভীরা দল গঠন করেন। সেই সময় সমবায়মন্ত্রী মতিউর রহমান চাঁপাইনবাবগঞ্জ আসলে তাঁর সামনে প্রথমবারের মতো নাতি হিসেবে গম্ভীরা গান পরিবেশন করেন। নানা ছিলেন আরেক কিংবদন্তি গম্ভীরা শিল্পী কুতুবল আলম। এরপর ১৯৭২ সালে নাটোরের উত্তরা গণভবনে বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের সামনে গম্ভীরা গান পরিবেশনার সুযোগ পান রকিব-কুতুব। প্রথম পরিবেশনায় বঙ্গবন্ধুর গভীর সান্নিধ্য লাভ করেন। বঙ্গবন্ধু নিজেই গম্ভীরা গানের ভক্ত হয়ে যান এবং নানাভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করে গম্ভীরা গানকে পুনর্জীবিত করেন। জাতীয় পর্যায়ে গম্ভীরাকে প্রতিষ্ঠা করার পেছনে মূল কারিগর ছিলেন রকিবুদ্দিন ও কুতুবুল আলম। তাঁরা দু’জনেই ঢাকা ও রাজশাহী বেতারের প্রথম গ্রেডের শিল্পী ছিলেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনের নিয়মিত শিল্পী ছিলেন।

রকিব উদ্দিন শুধু গম্ভীরা শিল্পী নন, তিনি নিজেই ছিলেন সমস্ত গম্ভীরা গানের রচয়িতা। বিশাল এক গম্ভীরা গানের পাণ্ডুলিপি ছিল তাঁর। ১৯৯৪ এর ১৮ ডিসেম্বর থেকে ১৯৯৫ এর ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি ভারতের দিল্লী, কলকাতা, বর্ধমান, হলদিয়া, ডায়মন্ড হারবার এ গম্ভীরা পরিবেশন করেন। ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত কুতুবুল আলমকে সাথে নিয়ে গম্ভীরা করেন। কুতুবুল আলমের মৃত্যুর পর মাহবুবুল আলম ও সাইদুর রহমানকে নানা করে দল গঠন করে গম্ভীরা পরিবেশন করেন। ২০০৬ সালের ২ নভেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাসুনিয়াপট্টির নিজস্ব বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন প্রথিতযশা গম্ভীরা শিল্পী রকিবুদ্দিন। তাঁর পরিবারের অনেকেই বর্তমানে চাঁপাইনবাবগঞ্জে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। {অসমাপ্ত……/ বিস্তারিত প্রকাশিতব্য গ্রন্থ- ‘আলোকিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ’ www.alokito-chapainawabganj.com (চাঁপাইনবাবগঞ্জের দু’শো বছর ইতিহাসের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সংক্ষিপ্ত জীবনী-১ম ও ২য় খণ্ড), লেখক- মাহবুবুল ইসলাম ইমন}