খ্যাতিমান কবি, সাংস্কৃতিক সংগঠক ও সাংবাদিক মোহিত কুমার দাঁ ১৯৪০ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের ইসলামপুর মহল্লায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা প্রয়াত ভূ-দেব চন্দ্র দাঁ এবং মাতা প্রয়াত শৈলবালা দাঁ। তিনি ১৯৫৭ সালে নবাবগঞ্জ হরিমোহন ইন্সিটিটিউশন থেকে ম্যাট্রিকুলেশন, ১৯৬০ সালে নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে আই.কম এবং ১৯৬২ সালে বি.কম ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৬২ সালে রাজারামপুর হাসিনা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। দীর্ঘ ৩৮ বছর কৃতিত্ব আর সুনামের সাথে শিক্ষকতার দায়িত্ব পালন করে তিনি ২০০০ সালে অবসরে যান।
ছাত্রজীবন থেকে অদ্যাবধি চাঁপাইনবাবগঞ্জের সাহিত্য, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সাথে তিনি সক্রিয়ভাবে জড়িত। তাঁর রচিত অসংখ্য কবিতা, ছড়া, গান, গল্প, ফিচার দেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। সাংবাদিক হিসেবেও তাঁর খ্যাতি রয়েছে। সেই সময়কার তুখোড় সাহিত্যকর্মী মোহিত কুমার দাঁ চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রথম প্রেসক্লাব (১৯৬৩ সালে গঠিত)-নবাবগঞ্জ প্রেসক্লাব ও নবাবগঞ্জ সাংবাদিক সমিতির ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ১৯৬১ সাল থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত জাতীয় দৈনিক ইত্তেফাকের চাঁপাইনবাবগঞ্জের নিজস্ব সংবাদদাতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন প্রবীণ এই সাংবাদিক।
বিশিষ্ট সমাজসেবী মোহিত কুমার দাঁ চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ১৯৪৭-দেশ বিভাগ পরবর্তী সময়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রথম নাট্য গোষ্ঠী ‘প্রগতি নাট্য সংঘ’ (১৯৫৫) এর অন্যতম উদ্যোক্তা-প্রতিষ্ঠাতা সদস্য তিনি। ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘নবাবগঞ্জ সাহিত্য মজলিশ’ গঠনেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। জাতীয় সাহিত্য পরিষদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শাখার প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি যেসব প্রতিষ্ঠান/সংগঠন প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন সেগুলো হলো-কচিকাঁচার আসর (জাতীয় শিশু-কিশোর সংগঠন) চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শাখা, হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় প্রাক্তণ ছাত্র সমিতি, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শাখা), নবাবগঞ্জ শিক্ষক কল্যাণ সমিতি, কুতুবুল নানা স্মৃতি সংঘ উল্লেখযোগ্য। ক্রীড়াবিদ হিসেবেও মোহিত কুমার দাঁর সুনাম রয়েছে। ১৯৬০ সালে প্রায় দুই মাস ধরে বাই সাইকেল চালিয়ে সমস্ত পূর্ব পাকিস্তান পরিভ্রমন করেন তিনি। গণশিক্ষা বিস্তারের জন্য তিনি ১৯৮১ সালে প্রধানমন্ত্রীর সনদসহ পুরস্কার লাভ করেন। গুণি এই কবি, সাংস্কৃতিক সংগঠককে জাতীয় সাহিত্য পরিষদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শাখা থেকে ২০০৪ সালে ‘জাতীয় সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার ও সম্মাননা’ প্রদান করা হয়। শিক্ষকতা ও সাহিত্য-সংস্কৃতির পাশাপাশি বর্তমানে তিনি সনাতন ধর্মীয় কার্যকলাপসহ বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত রয়েছেন।{অসমাপ্ত…/