মুক্তি মাসুদ রানা

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন তরুণ গবেষক, আমেরিকার ডেলাওয়ার স্টেট ইউনিভার্সিটির প্রকৌশল-শিক্ষা ব্যক্তিত্ব ‘প্রফেসর ড. মুক্তি মাসুদ রানা’ ১৯৭৩ সালের ১ এপ্রিল চাঁপাইনবাবগঞ্জের রাণীহাটি ইউনিয়নের চক-আলমপুর গ্রামের বিশ্বাস পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতা আবুল কাশেম (সোনা বিশ্বাস) ও মাতা মনোয়ারা বেগম।
মাসুদ রানা খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেকট্রিকাল এবং ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং এ বি.এস.সি ডিগ্রি লাভ করে উচ্চ শিক্ষার জন্য বৃত্তি নিয়ে ১৯৯৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। যুক্তরাষ্ট্রের দি ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস, আরলিংটন থেকে ২০০২ সালে ইলেক্ট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ মাস্টার্স এবং ২০০৭ সালে একই বিষয়ে পি.এইচ.ডি ডিগ্রী অর্জন করেন।
কর্মজীবনে ড. মুক্তি রানা ২০০৮ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত আমেরিকার দি ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ অ্যালাব্যামার ইলেক্ট্রিকাল এন্ড কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক, পরবর্তীতে ডেলাওয়ার স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পদার্থ বিজ্ঞান এবং প্রকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে ড. রানা ডেলাওয়ার স্টেট ইউনিভার্সিটির পদার্থ বিজ্ঞান এবং প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এবং সেখানকার গবেষণা কেন্দ্র – অপটিকাল সাইন্স সেন্টার ফর অ্যাপ্লাইড রিসার্চের মুখ্য গবেষক (প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর)।
তিনি ডেলাওয়ার স্টেট ইউনিভার্সিটির নাসার পাঁচ মিলিয়ন ডলার অনুদানে প্রতিষ্ঠিত – অপটিক্স ফর স্পেস টেকনোলজি এন্ড অ্যাপ্লাইড রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক এবং মুখ্য গবেষক। এই সেন্টার নাসার মহাকাশ অভিযানের জন্য দরকারি নানা ইলেক্ট্রনিক দ্রব্যাদি নিয়ে গবেষণা করে থাকে।
ডেলাওয়ার স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপনা ও গবেষণা ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য ড. মুক্তি রানাকে ফ্যাকাল্টি এক্সসেলেন্স অ্যাওয়ার্ড ইন অ্যাডভাইজিং, ২০২১ প্রদান করে । ২০১৬ এবং ২০১৫ সালে ড. রানা একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যথাক্রমে ফ্যাকাল্টি এক্সেলেন্স অ্যাওয়ার্ড ইন রিসার্চ এবং ভাইস প্রেসিডেন্টস অ্যাওয়ার্ড ইন রিসার্চ পদক লাভ করেন। ২০১৫ সালে ডেলাওয়ার স্টেট ইউনিভার্সিটিকে বাহিরের জগতের সাথে উপস্থাপনের জন্য তিনি তাঁর অনুষদ থেকে ফ্যাকাল্টি এক্সেলেন্স অ্যাওয়ার্ড ইন আউটরিচ পদক লাভ করেন। ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে আটলান্টা শহরে অনুষ্ঠিত আমেরিকার দক্ষিণ অঞ্চলীয় শিক্ষা বোর্ডের বার্ষিক সম্মেলনে অধ্যাপনা ও গবেষণা ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ড. রানাকে ‘ফ্যাকাল্টি মেন্টর অফ দি ইয়ার, নাসা’ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।
খ্যাতিমান গবেষক ও প্রকৌশল ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক ড. মুক্তি রানা ২০১২ সাল থেকে মুখ্য গবেষক হিসেবে আমেরিকার বিভিন্ন কোম্পানি এবং সরকারি সংস্থা থেকে ১২ মিলিয়ন আমেরিকান ডলারেরও অধিক পরিমান অর্থ (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১০২ কোটি টাকা) গবেষণার জন্য অনুদান পেয়েছেন। প্রতিযোগিতার মধ্যে দিয়ে তাঁকে অনুদান প্রদানকারি সংস্থার মাঝে রয়েছে- নাসানাল সাইন্স ফাউন্ডেশন, আর্মি রিসার্চ অফিস, অফিস অফ নেভাল রিসার্চ, এয়ার ফোরস অফিস অফ সায়েন্টিফিক রিসার্চ, নাশানাল আরোনোটিক্স এন্ড স্পেস এডমিনিস্ট্রেশন (নাসা), নাসানাল ইন্সটিটুউট অফ হেলথ প্রভৃতি।
ড. রানার গবেষণার বিষয় নাইট ভিশন গগলস বা অন্ধকারের মধ্যে দিয়ে দেখা যায় এমন চশমার জন্য যে উপাদান ব্যবহারিত হয় তা নিয়ে কাজ করা। এই ধরনের চশমা সামরিক এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যাপকভাবে ব্যবহার করে থাকে। বিভিন্ন স্থাপনা ও মানুষের নিরাপত্তা, সীমান্ত পর্যবেক্ষণ, মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীর তল্লাশি, অগ্নি-নিবারণ ইত্যাদি বহুবিধ কাজে এই চশমার ব্যবহার হয়ে থাকে। এই বিষয়ে ড. রানার তিনটি প্যাটেন্ট বা মেধাসত্ব আছে। এবিষয়ে ২০১৯ সালে দুইটি প্যাটেন্ট পাবার পর, আমেরিকার এবিসি৪৭ টিভি চ্যানেলে ড. রানার গবেষণার উপর একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রচারিত হয়। এছাড়াও ডেলাওয়ার অঙ্গরাজ্যের রেডিও স্টেশন, খবরের কাগজগুলো বিভিন্ন সময় ড. রানার গবেষণা এবং তার অনুদান পাবার খবর ফলাও করে প্রকাশ করেছে।
ড. রানার গবেষণার ভুয়সী প্রশংসা করে ফেসবুক এবং টুইটার স্ট্যাটাস দেন আমেরিকার সিনেটর ক্রিস্টোফার কুনস। ওবামা সরকারের প্রাক্তন জ্বালানি মন্ত্রী নোবেল জয়ী বিজ্ঞানী ড. স্টিভেন চু, সীমান্ত এবং আভ্যন্তরীণ প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মি. জেহজনসনসহ ডেলাওয়ার থেকে নির্বাচিত আমেরিকার কংগ্রেসম্যান, সিনেটর এবং ডেলাওয়ার রাজ্যের গভর্নর ড. রানার গবেষণাগার পরিদর্শন করেছেন।
বহুবছর দেশের বাইরে থাকলেও নিজ জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষের জন্য বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন রকম সামাজিক কাজ-কর্ম করে থাকেন। মাদ্রাসা, মসজিদ এবং নবাবগঞ্জ এতিমখানার তিনি একজন নিয়মিত দাতা। ২০১৬ সালে তিনি এবং তার ছোটবোন যৌথভাবে গরীব ছাত্র-ছাত্রীদের ভতির্র খরচ জোগাতে কৃষ্ণগোবিন্দপুর ডিগ্রি কলেজে তাঁদের বাবা মায়ের নামে “সোনামণি” ট্রাস্ট গঠন করেন। {অসমাপ্ত……/ বিস্তারিত প্রকাশিতব্য গ্রন্থ- ‘আলোকিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ’ www.alokito-chapainawabganj.com (চাঁপাইনবাবগঞ্জের দু’শো বছর ইতিহাসের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সংক্ষিপ্ত জীবনী)}