বিশিষ্ট সমাজসেবী, মানবতাবাদী, আলোকিত মানুষ- মাহাতাব উদ্দিন সরকার ১৯০৩ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের রাজারামপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ইসমাইল সরকার এবং মাতার নাম হাসিনা খাতুন। মাহতাব উদ্দিনের ডাক নাম ছিল ‘ফুকা’। তৎকালীন অবিভক্ত ব্রিটিশ বাংলায় ‘ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট পদ অলংকৃত করেছিলেন বলে গ্রামগঞ্জের মানুষ তাঁকে ‘ফুকা ডিপটি’ নামে আখ্যায়িত করেছিলেন। সেই সময় তিনি সমাজসেবী ‘ফুকা ডিপটি’ নামে ব্যাপক জনপ্রিয় ছিলেন।
মাহাতাব উদ্দিন তাঁর বর্ণাঢ্য জীবনে চাকুরির সুবাদে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেরিয়েছেন, দীর্ঘ সময় কলকাতায় কাটিয়েছেন। পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর এবং প্রখ্যাত রাজনীতিক শেরে বাংলা এ.কে.ফজলুল হক সাহেবের অত্যন্ত ¯েœহের এবং আশীর্বাদপুষ্ট ছিলেন তিনি। তৎকালীন ব্রিটিশ বাংলায় তিনি মুর্শিদাবাদ, কুষ্টিয়া, পাবনার সেকেন্ড অফিসার/ডিস্টিক্ট্র ম্যাজিস্ট্রেট (ডিসি) ছিলেন। তিনি ছিলেন ডি.এল.আর বা ভূমি ও রাজস্ব বিভাগের তৎকালীন পরিচালক। সবশেষে তিনি অবিভক্ত বাংলার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘শিক্ষা সচিব’ হয়েছিলেন। চাকুরি থেকে অবসরগ্রহণের পর তিনি রাজনীতিতে যুক্ত হন। তিনি ইউ.পি চেয়ারম্যান, নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যানসহ ষাটের দশকে এম.এন.এ হিসেবে নির্বাচিত হয়ে সংসদে বসে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দিয়েছিলেন। মূলত তিনি যেখানেই কাজ করেছেন, সেখানেই তার সফলতার স্বাক্ষর রেখেছেন।
মাহাতাব উদ্দিন সরকার ওরফে ‘ফুকা ডিপটি’ তৎকালীন অবিভক্ত বাংলায়, এমনকি পূর্ব পাকিস্তানেও সমাজসেবী-জনদরদী হিসেবে জনপ্রিয়তার চরম শিখরে আরোহণ করেছিলেন। তাঁর কাছে কোন আরজি, আবেদন নিয়ে গেলে তিনি কাউকে ফিরিয়ে দিতেন না। তাঁর জন্মস্থান চাঁপাইনবাবগঞ্জের বহু মানুষকে তিনি চাকুরি দিয়েছিলেন। সমাজ এবং এলাকার মানুষের কল্যাণে তিনি ছিলেন উদার, সদা জাগ্রত এক মহৎ ব্যক্তিত্ব। নারী শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে, রাজারামপুর গ্রামে তাঁর মায়ের নামানুসারে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ‘হাসিনা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়’। চাঁপাইনাববগঞ্জ আম গবেষণা কেন্দ্র এবং আমের আচার, ও জুস তৈরির কারখানা স্থাপনে তাঁর ছিল গুরুত্বপূর্ণ অগ্রণী ভূমিকা।
ব্যক্তিগত জীবনে মাহতাব উদ্দিন ছিলেন চার ছেলে ও চার মেয়ের জনক। তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র ড.ফসিউদ্দিন মাহাতাব বিয়ে করেছিলেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত সমাজসেবী প্রফেসর ডা.ইব্রাহিম সাহেবের কন্যা- প্রফেসর ডা.হাজেরা মাহতাবকে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃতি সন্তান- ড.ফসিউদ্দিন মাহাতাব রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং তৎকালীন সরকারের প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন। বিশিষ্ট সমাজসেবী, মানবতাবাদী, আলোকিত মানুষ- মাহাতাব উদ্দিন সরকার ১৯৭৯ সালে মৃত্যুবরণ করেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা থেকে ২০০৩ সালে গুণি এই সমাজসেবী ব্যক্তিকে ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা শতবর্ষ পূর্তি উৎসব সম্মাননা’ প্রদান করা হয়। { অসমাপ্ত…/ বিস্তারিত প্রকাশিতব্য মূল গ্রন্থ- ‘আলোকিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ’ (চাঁপাইনবাবগঞ্জের দু’শো বছর ইতিহাসের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সংক্ষপ্তি জীবনী)}