‘মহম্মদ ইসাহাক’ একজন বিশিষ্ট আইনজীবী, লেখক ও সমাজসেবী। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির বর্তমান সভাপতি এড. ইসাহাক ১৯৫৮ সালের ২০ জানুয়ারী তৎকালীন ভারতের মালদহ জেলার (চাঁপাইনবাবগঞ্জ ১৯৪৭ পূর্ববর্তী সময়ে মালদহের মহকুমা ছিল, ৪৭ পরবর্তী সময়ে বৃহত্তর রাজশাহী জেলার অন্তর্ভুক্ত মহকুমা ছিল) সাহাপুর অঞ্চলের রশিলাদহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা আলহাজ্ব ইউনুস মন্ডল ছিলেন সমাজসেবী, মালদহ-সাহাপুরের সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি। পাঁচ ভাই ও ছয় বোনের মধ্যে তিনি পিতা-মাতার কনিষ্ঠ সন্তান। ৬০ এর দশকে মালদহের সাহাপুর থেকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজশাহী জেলার নবাবগঞ্জ মহকুমার নাচোলে চলে আসে তাঁর পরিবার এবং সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে।
‘মহম্মদ ইসাহাক’ ১৯৭৩ সালে নাচোল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ১৯৭৫ সালে রাজশাহী কলেজে ভর্তি হলেও পরবর্তীতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। উল্লেখ্য, সেই সময়ে নাচোল কলেজসহ ৩টি কলেজ মিলে একটি সেন্টার ছিল। এইচএসসি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগে এই সেন্টার থেকে প্রথম স্থান অধিকার করেন মেধাবী ছাত্র ‘মহম্মদ ইসাহাক’। ১৯৭৯ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জুরিসপ্রুডেন্সে স্নাতক (সম্মান) এবং ১৯৮০ সালে তিনি জুরিসপ্রুডেন্সে মাস্টার্স ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৮৩ সালে রাজশাহী জেলা জজ কোর্টে ওকালতী প্র্যাকটিস শুরু করেন। বছরখানেক পরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। দীর্ঘ চার দশক ধরে তিনি ওকালতী পেশায় যুক্ত রয়েছেন।
দীর্ঘদিন ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সভাপতি হিসেবে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গরীব-মেধাবী শিক্ষার্থীদের অনুদান, বৃত্তি প্রদানসহ নানামুখী সেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। পাশাপাশি ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শাখার লিগ্যাল এ্যাডভাইজার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। নিজ এলাকা চাঁপাইনবাবগঞ্জের ‘নাচোল কল্যাণ ফাউন্ডেশন’ এর তিনি প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য। নাচোল কল্যাণ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান, দুস্থদের বিভিন্ন প্রকার সহযোগিতা করে আসছেন। এছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, স্কুল-কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসায় পৃষ্ঠপোষকতা করে থাকেন সমাজসেবী ‘মহম্মদ ইসাহাক’।
লেখক ও সাংবাদিক হিসেবেও তাঁর সুনাম রয়েছে। আশির দশকে জাতীয় পত্রিকা দৈনিক বার্তায় নিয়মিত লেখালেখি করেছেন। মাসিক পৃথিবী ও সাপ্তাহিক সোনার বাংলায় নিয়মিত কলাম লিখেছেন। কলকাতা থেকে প্রকাশিত মিজান পত্রিকায় কলাম লিখেছেন দীর্ঘদিন। ১৯৮১ সালে পাবনা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক বিবৃতি সংবাদদাতা হিসেবে ভারত সফর করেন। সেই সময়ের ভারতের কলকাতার বিখ্যাত ব্যক্তিদের (রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ) সাক্ষাতকারগ্রহণ করেন। ঐতিহাসিক তেভাগা আন্দোলনের নেত্রী ইলামিত্র, সিপিআই নেত্রী গীতা চৌধুরী, সর্বভারতীয় ফুটবল কোচ অরুণ ঘোষ, বনশ্রী সেনগুপ্ত, মাওলানা জালাল উদ্দিন উমরি প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সান্নিধ্যে এসেছেন, তাঁদের সাক্ষাতকারগ্রহণ করেছেন।
বেশ কিছু গ্রন্থ রচনা করেন তিনি। প্রসঙ্গ বিচিত্রা (২০০১), ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের যা প্রয়োজন (২০০৪), এখনই সময় (২০০৭), স্বল্প জ্ঞানের অল্প কথা (২০২৩), শিষ্টাচার (প্রকাশিতব্য) প্রভৃতি তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। এছাড়াও স্থানীয় বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, স্মরণিকা সম্পাদনা করেছেন। অন্বেষা (১৯৯৫), স্মরণিকা (বিজয় দিবসের বিশেষ প্রকাশনা (১৯৯৮), মুকুল (বার্ষিক স্মারক ২০০০), শতাব্দী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ আইনজীবী সমিতি শতবর্ষপূর্তি স্মরণিকা (২০২২) প্রভৃতি তাঁর সম্পাদিত উল্লেখযোগ্য স্মরণিকা। লেখক-গুণীজন হিসেবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে সম্মাননাপ্রাপ্ত হয়েছেন। এফএমডিএফবি সম্মাননা স্মারক (২০০৯), বিসিপিএস সম্মাননা স্মারক (২০১০), ফুলকুঁড়ি আসরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও রজতজয়ন্তী সম্মাননা স্মারক (১৯৯৯), শিব নারায়ণপুর ইসলামী সাংস্কৃতিক পরিষদ সম্মাননা (২০১১) প্রভৃতি।
কাজী নজরুল ইসলাম পরিষদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সভাপতি, বাংলাদেশ ল’ইয়ার্স কাউন্সিল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সভাপতি, গৌড় সাহিত্য পরিষদ চাঁপাইনবাবগঞ্জ এর প্রধান উপদেষ্টা, হাই কেয়ার (মুক ও বধিরদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান) এর উপদেষ্টা, যুব কল্যাণ সমিতি (উপদেষ্টা), ফুলকুড়ি আসর (জাতীয় শিশু কিশোর সংগঠন) এর উপদেষ্টা, বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আজীবন সদস্য, `আলোকিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ ফাউন্ডেশন’ এর আজীবন সদস্য, চাঁপাইনবাবগঞ্জ টাউন ক্লাব আজীবন সদস্য, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সহ-সভাপতি, হিলফুল ফুজুল সমিতি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এর সাবেক সভাপতি, মানবাধিকার বাস্তবায়ন সমিতি এর সাবেক জেলা সাধারণ সম্পাদক, আমরা ক’জন (অধুনা প্রগতি), নাচোল এর প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতির (২ টার্ম)সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন।
বর্তমানে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচিত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সুবক্তা হিসেবে এডভোকেট মহম্মদ ইসাহাকের সুনাম রয়েছে। দেশ ও দেশের বাইরে বিভিন্ন জাতীয়-আন্তর্জাতিক সভা-সেমিনারে অংশগ্রহণ করেছেন, মোটিভেশনাল বক্তব্য রেখেছেন। বিভিন্ন স্থানে তাফসীর ও ধর্মীয় জলসায় বক্তব্য দিয়েছেন। ভারত, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন।
কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে নাটক ও থিয়েটার পরিচালনা করেছেন। ছাত্রজীবনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (জাসদ) এর রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সৈয়দ আমির আলী হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। পরবর্তী সময়ে তাবলীগ জামায়াত কিছুদিন করেন। এরপর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা জামায়াতের অন্যতম শীর্ষ নেতা। তাঁর সুযোগ্য স্ত্রী তাসলিমা আকতার বানু চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহিলা মাদ্রাসার বিজ্ঞানের শিক্ষক। জামায়াতে ইসলামী মহিলা সেক্রেটারী (২ টার্ম) দায়িত্ব পালন করেন। তাঁদের দুই কন্যা ও এক পুত্র সন্তান রয়েছে। { অসমাপ্ত…/ বিস্তারিত প্রকাশিতব্য গ্রন্থ- ‘আলোকিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ’ www.alokito-chapainawabganj.com (চাঁপাইনবাবগঞ্জের দু’শো বছর ইতিহাসের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সংক্ষিপ্ত জীবনী ১ম ও ২য় খণ্ড) লেখক- মাহবুবুল ইসলাম ইমন}