বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ডা.মঈন উদ্দীন আহমেদ মন্টুই একমাত্র বেসামরিক কোন মুক্তিযোদ্ধা, যিনি সাব-সেক্টরের কমান্ডার (মুক্তিযুদ্ধের ৭নং সেক্টরের মোহদীপুর সাব-সেক্টরের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার, ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের দায়িত্ব নেবার পূর্ব পর্যন্ত অর্থাৎ ১৯৭১ সালের ২২ নভেম্বরের আগের কিছু দিন) হিসেবে দায়িত্ব পালন করার বিরল সৌভাগ্য অর্জন করেন। জাতীয়-স্থানীয়ভাবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাবাসীর অহংকার ও গর্ব- ডা.মঈন উদ্দীন আহমেদ মন্টু জন্মেছিলেন ১৯৩৬ সালের ১ নভেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা-পিয়ালীমারী গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে। ১৯৬৬’র ছয়দফা, ৬৯’র অসহোযোগ আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধসহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ডা. মঈন উদ্দীন আহমেদ মন্টুর সক্রিয় অংশগ্রহণ ও যোগ্য নেতৃত্ব চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার রাজনৈতিক ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেছে।
বর্ণাঢ্য এবং সফল রাজনৈতিক জীবনে ডা.মঈন উদ্দীন আহমেদ ছিলেন শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা-চেয়ারম্যান, প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য (১৯৭০), স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে গণপরিষদ সদস্য (১৯৭১-৭২), জাতীয় সংসদ সদস্য (১৯৭৩ সালে প্রথম ও ১৯৮৬ সালে দ্বিতীয়বার)। ১৯৭৫ এর রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের আগে তৎকালীন বাংলাদেশ সরকার ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহকর্মী ছিলেন ডা.মঈন উদ্দীন আহমেদ মন্টু ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ডা.মেসবাহুল হক বাচ্চু। অসহযোগ আন্দোলন হতে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দান করেন। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত করা এবং পরিচালনার জন্য ৭ নং সেক্টরের অধীনে চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রথমত পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট এবং পরবর্তীতে সম্প্রসারিত করে দশ সদস্য বিশিষ্ট গঠিত স্টিয়ারিং কমিটির তিনি অন্যতম সদস্য ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তিনি ৭নং সেক্টরের মোহদীপুর সাব-সেক্টরের (ভারপ্রাপ্ত) কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন (ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের দায়িত্ব নেবার পূর্ব পর্যন্ত অর্থাৎ ১৯৭১ সালের ২২ নভেম্বরের আগের কিছু দিন)। তিনি ছিলেন একাধারে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, রণাঙ্গণের কুশলী সমরনায়ক ও বীরযোদ্ধা। আহত যোদ্ধাদের চিকিৎসা প্রদানের জন্য তিনি মুক্তাঞ্চলে স্বাস্থ্যকেন্দ্রও চালু করেছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি নিজ হাতে তাঁদের চিকিৎসা প্রদান করতেন।
মঈন উদ্দীন আহমেদ মন্টু চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ১৯৭৩-৭৭ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৭৯ সালে তৎকালীন বৃহত্তর রাজশাহী আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন। এলাকার উন্নয়নে তিনি বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজ করেছেন। তিনি শিবগঞ্জের মনাকষা আলিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এছাড়া, মনাকষা কাবসহ শিবগঞ্জের বিভিন্ন শিক্ষা, সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, রণাঙ্গণের বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা.মঈন উদ্দীন আহমেদ মন্টু ২০১১ সালের ২ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। {অসমাপ্ত…/ বিস্তারিত প্রকাশিতব্য মূল গ্রন্থ- ‘আলোকিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ’ (চাঁপাইনবাবগঞ্জের দু’শো বছর ইতিহাসের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সংক্ষপ্তি জীবনী)}