বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ‘নূর হামীম রিজভী’ জাতির সূর্য সন্তান। একজন গুণী সংগীত শিল্পী ও সাংস্কৃতিক সংগঠক ‘নূর হামিম রিজভীর’ পিতা আবদুল আল্লাম এবং মাতা নূর মহল।
তাঁর পৈত্রিক নিবাস গোদাগাড়ী উপজেলার পিরিজপুরে হলেও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রাজশাহীর মুক্তিযুদ্ধে ও সাংস্কৃতিক অঙ্গণে তাঁর বিশেষ অবদান রয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জে দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করেছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের স্বনামধন্য সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘উত্তরায়ণ’-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি। সংগীত শিল্পী আলাউদ্দিনসহ তখনকার সময়ের অনেক প্রতিষ্ঠিত শিল্পী ছিল তাঁর হাতে গড়া। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারের তালিকাভুক্ত শিল্পী ছিলেন। রাজশাহী বেতারের সংগীত পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। রাজশাহী জেলা প্রশাসনসহ বি়ভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে পেয়েছেন গুণীজন সম্মাননা।
‘নূর হামিম রিজভী’ ১৯৭১ সালে এইচএসসির শিক্ষার্থী থাকাকালীন মহান মুক্তিযুদ্ধ অংশগ্রহণ করেন। সেই সময় তিনি মা, ছোট ভাই ও বোন, নানীকে নিয়ে রাজশাহী থেকে ভারতের মুর্শিদাবাদে নানার বাড়িতে আশ্রয় নেন।
রিজভী ভারতের চাকুলিয়ায় প্রশিক্ষণ নিয়ে ক্যাপ্টেন গিয়াসউদ্দীন আহমদের অধীনে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। রাজশাহীর গোদাগাড়ী চাপল মসজিদসংলগ্ন স্থানে পাকিস্তানি মিলিশিয়া ও রাজাকারদের ক্যাম্প। সন্ধ্যার পর থেকে সেখানে পাকিস্তানি বাহিনীও অবস্থান করত আর টহল দিত। ক্যাপ্টেন গিয়াসউদ্দিন এক দিন মুক্তিযোদ্ধাদের নির্দেশ দিলেন পাকিস্তানি বাহিনীকে অ্যামবুশ করার। রেকি করে তাঁরা স্থান নির্বাচন করলেন আলিমগঞ্জের কসবা নামের স্থান। সেদিন ছিল ৭ নভেম্বর। প্রতিদিন রাত ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে পাকিস্তানি বাহিনীর টহল গাড়ি ওই জায়গা ক্রস করে চাঁপাইনবাবগঞ্জে যায়। রাত ১১টার দিকে পাকিস্তানি বাহিনীর টহল গাড়ি সেখানে এলে মুক্তিযোদ্ধারা একযোগে আক্রমণ চালান। মুহূর্তে গাড়িটি ঝাঁঝরা হয়ে গেল। গাড়িতে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পাঞ্জাব রেজিমেন্টের এক ক্যাপ্টেন, নয়জন সেনা ও পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগী এক বাঙালি পুলিশ কর্মকর্তা। রিজভী এর আগে ও পরে আরও কয়েকটি অপারেশনে অংশ নিয়েছেন। এই অপারেশন তাঁর জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় ঘটনা। বীরত্বপূর্ণ এই অপারেশনের জন্য তিনি বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত হোন।
তিনি ভালো ফুটবল ও ক্রিকেট খেলতেন। ফুটবলের রেফারি এবং ক্রিকেটের আম্পায়ার ছিলেন। ৯০ এর দশকে তিনি গোদাগাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগে নেতৃত্ব দিয়েছেন। রাজশাহী মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের দীর্ঘদিন কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা ‘নূর হামিম রিজভী’ ২০১৬ সালে ২২ ফেব্রুয়ারী মৃত্যুবরণ করেন। {অসমাপ্ত……/ বিস্তারিত প্রকাশিতব্য গ্রন্থ- ‘আলোকিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ’ www.alokito-chapainawabganj.com (চাঁপাইনবাবগঞ্জের দু’শো বছর ইতিহাসের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সংক্ষিপ্ত জীবনী ১ম ও ২য় খণ্ড) লেখক- মাহবুবুল ইসলাম ইমন }