নূরুল ইসলাম বুলবুল

Share With

‘মো.নূরুল ইসলাম বুলবুল’ একজন বিশিষ্ট রাজনীতিক-সমাজসেবী ও শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিত্ব। কেন্দ্রীয় সাবেক ছাত্রনেতা (বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি) ‘নূরুল ইসলাম বুলবুল’ ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনে স্বতন্ত্রভাবে (জামায়াত মনোনিত) অংশগ্রহণ করেন। বর্তমান বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা ‘নূরুল ইসলাম বুলবুল’ ১৯৬৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারী চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার রেহাইচর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।

তিনি কৃতী পরিবারে সদস্য। তাঁর নানা আলহাজ্ব মাওলানা সুজাউদ্দীন ছিলেন স্বনামধন্য আলেম ও সমাজসেবী। তিনি ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের হেফজুল উলুম ফায়েজা খানম কামিল মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি। ‘নূরুল ইসলাম বুলবুল’ এর পিতা মোহাম্মদ ইসরাইল ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষ্ণগোবিন্দপুর ডিগ্রী কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ। দুই ছেলে ও এক মেয়ের জনক নূরুল ইসলাম বুলবুলের মাতা নুরজাহান বেগম নুরী। ছয় ভাই ও চার বোনের মধ্যে তিনি পিতা-মাতার জ্যেষ্ঠ সন্তান। তাঁর স্ত্রী কোহিনুর আখতার সীমা।

‘নূরুল ইসলাম বুলবুল ১৯৮৩ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে ১৯৮৫ সালে এইচএসসি এবং ১৯৮৭ সালে বিএসএস ডিগ্রি অর্জন করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৫ সালে এমএসএস (রাষ্ট্রবিজ্ঞান) ডিগ্রি  লাভ করেন।

স্কুল জীবন থেকেই তিনি বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ কলেজ ছাত্রশিবিরের সভাপতি (১৯৮৭), চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর ছাত্রশিবিরের  সভাপতি (১৯৮৮),  রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র শিবিরের সভাপতি (১৯৯৫) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬-৯৭ সালে তিনি শিবিরের রাজশাহী মহানগরী সভাপতি, কেন্দ্রীয় কমিটির অফিস সম্পাদক (১৯৯৮), দাওয়াহ সম্পাদক (১৯৯৯), কেন্দ্রীয় কমিটির সেক্রেটারি জেনারেল (২০০০) এর  দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ ২০০১ ও ২০০২ (দুই মেয়াদে)  সালে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাচিত সভাপতির  দায়িত্ব পালন করেন।

তুখোর ছাত্রনেতা ‘নূরুল ইসলাম বুলবুল’ ১৯৮৭ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হোন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯০ সালে রাকসু নির্বাচনে শহীদ শামসুজ্জোহা হল সংসদের জিএস নির্বাচিত হন। ১৯৮৫ সালের ঐতিহাসিক ১১ মে কোরআন দিবসে, কোরআন অবমাননার প্রতিবাদ-আন্দোলন-সংগ্রামে তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ১৯৯৫ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে দেশব্যাপী গড়ে ওঠা আন্দোলনে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ২০০০ সালে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের খসড়া নীতিমালা প্রণয়ন কমিটির তিনি যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন। রাজনৈতিক কারণে ছাত্রজীবন এবং পরবর্তী জীবনে বহু মামলায় বারবার কারাবরণ করেছেন।

২০০৪-০৫ সালে  তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরীর গুলশান থানা আমীরের দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরীর সেক্রেটারি (২০১২-২০১৬) দায়িত্ব পালন শেষে ২০১৭ সাল থেকে অদ্যাবধি সুনামের সাথে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নির্বাচিত আমীর হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। একইসঙ্গে  তিনি জামায়াতের সর্বোচ্চ ফোরাম কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য প্রভৃতি দায়িত্ব পালন করছেন।

রাজনীতির পাশাপাশি শিক্ষানুরাগী, সমাজসেবী হিসেবে তাঁর সুনাম রয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সিটি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে কিছুদিন শিক্ষকতা করেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে প্যান এশিয়াটিক স্কুল এন্ড কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। শিশু-কিশোদের শারীরিক-মানসিক বিকাশের লক্ষ্যে, সেই ছোট অবস্থায়  তিনি নিজ এলাকায় শিশু সংগঠন RICO গড়ে তোলেন।

ঢাকায় ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জাবালে নূর হাসপাতাল ও ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (BIU) এর রেজিষ্ট্রারের দায়িত্ব পালন করেন। রাজনৈতিক ব্যস্ততায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকুরী থেকে অব্যাহতি নেন। বিভিন্ন সময়ে তিনি উদ্যোক্তা পর্যায়ের ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত হন। বর্তমানে একটি যৌথ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

দীর্ঘদিন ধরে তিনি ঢাকা দক্ষিণ মহানগরী (সিটি কর্পোরেশন) এলাকার মানুষের কল্যাণে নানামুখী অবদান রাখছেন। নিজ এলাকা চাঁপাইনবাবগঞ্জ  মানুষদের কল্যাণেও ভূমিকা রাখছেন। অসহায়, দুস্থ মানুষদের বিভিন্ন প্রকার সহযোগিতা করে আসছেন। পঙ্গু অসহায় মানুষদের হুইল চেয়ার বিতরণ, আর্থিক সহযোগিতা করছেন। চক্ষু শিবিরসহ বিভিন্ন সেবামূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করেছেন। রাজশাহী মহানগরী ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গরীব ও মেধাবী ছাত্রদের জন্য তিনি  বৃত্তি প্রকল্প চালু করেছেন। বৈশ্বিক মহামারী করোনাকালসহ বন্যা-প্রাকৃতিক দূর্যোগে ঢাকা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিভিন্ন ত্রাণসামগ্রী সংগ্রহ ও বিতরণ করেছেন। তাছাড়া, বিভিন্ন মসজিদ-মাদ্রাসা, স্কুল কলেজে দান-অনুদান দিয়ে থাকেন সমাজসেবী নূরুল ইসলাম বুলবুল।

সম্প্রতি উত্তরবঙ্গের তাফসিরুল কুরআন মাহফিলের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ, এক ঐতিহাসিক তাফসিরুল কুরআন মাহফিল অনুষ্ঠিত হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জে। রাজশাহী বিভাগীয় এই তাফসির মাহফিলে লাখো ধর্মপ্রাণ মানুষের উপস্থিতিতে, দেশের জনপ্রিয় ইসলামি বক্তা ও ইসলামিক স্কলার ড. মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী কুরআন থেকে আলোচনা করেন। তাফসির মাহফিলটির উদ্যোগ গ্রহণ এবং পৃষ্ঠপোষকতা করেন নূরুল ইসলাম বুলবুল। জাবালুন নূর ফাউন্ডেশন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের মাধ্যমে তিনি নিজ এলাকার মানুষদের নিয়ে মহতী এই উদ্যোগটি সফল করেন।

তিনি ঢাকাস্থ ইসলামিক হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা-চেয়ারম্যান, মিরপুর ইসলামী ফাউন্ডেশনের সভাপতি, ঢাকাস্থ চাঁপাইনবাবগঞ্জ ফোরামের সভাপতি, জাতীয় অন্ধকল্যাণ সমিতি, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আজীবন সদস্য, আল কোরআন ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাকালীন সেক্রেটারীসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করছেন।

১৯৯০ সালে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নুরুল ইসলাম বুলবুলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সেই সময়কার স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে  ছাত্রসমাজের ভূমিকার প্রেক্ষিতে তৎকালীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদের সাথে রাকসু ও হল সংসদের নেতৃবৃন্দের ভারত সফরকালে হল সংসদের জিএস হিসেবে তিনি ভারত সফর করেন। ২০০১ ও ২০০২ সালে তিনি পবিত্র হজ্ব পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরব গমন করেন। ২০০১ সালে WAMY- এর উদ্যোগে World Youth Conference এ যোগদানের উদ্দেশ্যে মালয়েশিয়া গমন করেন। ২০০২ সালে WAMY- এর উদ্যোগে রিয়াদে অনুষ্ঠিত চতুর্থ বার্ষিক সম্মেলনে Muslim Youth and Globalization শীর্ষক কনফারেন্সে যোগদান করেন। একই সময় রিয়াদে অনুষ্ঠিত Asian Federation of Muslim Youth- এর কার্যকরী কমিটির সভায় যোগদান করেন। রাষ্ট্রীয় সফর হিসেবে ২০০৩ সালে শ্রীলঙ্কা এবং ২০২৪ সালে চীন ভ্রমণ করেন। তিনি এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের সহকারী সেক্রেটারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। { অসমাপ্ত…/ বিস্তারিত প্রকাশিতব্য গ্রন্থ- ‘আলোকিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ’ www.alokito-chapainawabganj.com (চাঁপাইনবাবগঞ্জের দু’শো বছর ইতিহাসের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সংক্ষিপ্ত জীবনী ১ম ও ২য় খণ্ড) লেখক- মাহবুবুল ইসলাম ইমন}