প্রফেসর নওয়াব আলী ৬০-৭০ দশকের নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের গুণি শিক্ষক। হোমিও চিকিৎসক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও মানুষ গড়ার কারিগর-আদর্শ শিক্ষক হিসেবে তাঁর সুনাম রয়েছে। অধ্যাপক নওয়াব আলী ১৯৩৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জের বারোঘরিয়ার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করে। তাঁর পিতা কুড়ান আলী বিশ্বাস ছিলেন বারোঘরিয়া এলাকার গুণি শিক্ষক এবং স্বনামধন্য ব্যক্তিত্ব।
নওয়াব আলী ১৯৫৫ সালে নবাবগঞ্জ হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন (প্রথম শ্রেণী) পাস করেন। ছোটবেলায় থেকেই শারিরীকভাবে তিনি বিভিন্ন জটিল অসুখে ভুগেছেন। মূলত শারিরীক অসুস্থতা ও বিভিন্ন প্রতিকূলতাকে জয় করে তিনি উচ্চ শিক্ষাগ্রহণ করেন।
১৯৫৫ সালে নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ প্রতিষ্ঠার হলে প্রথম ব্যাচের ১৫ জন ছাত্রের একজন ছিলেন নওয়াব আলী। ১৯৫৭ সালে নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে তিনি ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। ১৯৬০ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় অনার্স এবং ১৯৬২ সালে মাস্টার্স ডিগ্রী লাভ করেন।
কর্মজীবনের প্রথম দিকে ফরিদপুর রাজবাড়ি কলেজে বাংলা বিভাগে কিছুদিন শিক্ষকতা করলেও ১৯৬৩ সালে নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজে বদলি হয়ে আসেন। নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজে দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করেন। ১৯৭৯ সালে ৭ ই মে নবাবগঞ্জ কলেজ জাতীয়করণ হলে ১৯৮১ সালে তিনি হবিগঞ্জের বৃন্দাবন কলেজে বদলি হন। বৃন্দাবন কলেজে থাকাকালীন তিনি কবিতা লিখতেন এবং সেই কলেজ থেকে বিদায় নেবার সময় তাঁর কলেজের প্রিয় ছাত্র-ছাত্রীদের উৎসর্গ করে ‘আলোর প্রত্যাশা’ নামে কবিতাগ্রন্থ প্রকাশ করেন। ১৯৮৪- ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত পাবনা এ্যাডওয়ার্ড কলেজে শিক্ষকতা করেন। ১৯৯১ সালে আবারও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি কলেজে বদলি হয়ে আসেন এবং সেখান থেকেই অবসর গ্রহণ করেন।
দীর্ঘ ৩০ বছর সুনাম এবং সাফল্যের সাথে শিক্ষকতা করেছেন। মানুষ গড়ার কারিগর-আদর্শ শিক্ষক হিসেবে তাঁর পরিচিতি রয়েছে। শিক্ষকতা জীবনে বহু ছাত্র-ছাত্রী পড়িয়েছেন। যারা আজ জেলার কৃতি সন্তান, দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন উচ্চ পদস্থ সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা।
তিনি বেশ কটি নাটক লেখেন এবং সেই নাটক মঞ্চস্থ করেন, অভিনয় করে প্রশংসিতও হন। ভালো গান লিখতেন এবং ভালো রবীন্দ্রসংগীত গাইতেন। তাঁর বাসায় প্রতিদিন সন্ধ্যায় গানের আসর বসতো।
রাজশাহী বেতারে ২৫ টি গান লিখে এক ছাত্রের মাধ্যমে পাঠাতে থাকেন কিন্তু দু:খজনকভাবে সেই গানগুলো গীতিকারের নাম মো. নওয়াব আলীর নামে প্রচারিত না হয়ে অন্য নামে প্রচারিত হয়।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে নিজ বাড়িতে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়, সেবা-শুশ্রূষাসহ মহানন্দার ওপারে বারোঘরিয়ায় আটকে থাকা অনেক অসহায় মানুষদের আশ্রয় দিয়েছেন। ১০০ জন বুদ্ধিজীবী হত্যার তালিকায় তাঁর নাম ছিল ১ নম্বরে। তিনি অকুতোভয় ছিলেন সবসময়।
সরাসরি রাজনীতিতে না জড়ালেও নেপথ্যে থেকে আওয়ামীলীগের হয়ে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে নিরলস কাজ করে গেছেন। তিনি ছিলেন ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটর।
তিন ছেলে ও চার মেয়ের জনক নওয়াব আলী মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের বালুবাগান এলাকায় বাড়ি করে পরিবারসহ স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন । তাঁর সুযোগ্য সন্তান ডা. রাতুল মাহমুদ সজল স্বনামধন্য হোমিও চিকিৎসক এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর হোমিওপ্যাথি কলেজের সহকারী অধ্যাপক। আরেক সুযোগ্য সন্তান মৌসুমী রুমা ও চন্দ্রশিলা ছন্দা দু’জনেই লেখক হিসেবে সুনাম অর্জন করেছেন। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও চিকিৎসক নওয়াব আলী ১৯৯৫ সালের ২৩ শে ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন। {অসমাপ্ত……/ বিস্তারিত প্রকাশিতব্য গ্রন্থ- ‘আলোকিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ’ www.alokito-chapainawabganj.com (চাঁপাইনবাবগঞ্জের দু’শো বছর ইতিহাসের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সংক্ষিপ্ত জীবনী-১ম ও ২য় খণ্ড), লেখক- মাহবুবুল ইসলাম ইমন}