বিশিষ্ট সমাজসেবী ও সংগঠক ‘প্রকৌশলী একেএম খাদেমুল ইসলাম ফিকসন’ ১৯৬০ সালের ১ জানুয়ারী চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের মিস্ত্রীপাড়ার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা প্রয়াত সেকেন্দার আলী এবং মাতা প্রয়াত নাজাতুন নেসা (রত্নগর্া)
১৯৮৪ সালে রাজশাহী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (বর্তমানে রুয়েট) থেকে বি.এস.সি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৯৮৪ সালে বিসিএস ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত হয়ে আনসার-ভিডিপির পরিচালক হিসেবে সুনামের সাথে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাসহ বিভিন্ন জেলা ও ব্যাটালিয়নে দায়িত্ব পালন করে বর্তমানে অবসর গ্রহণ করেছেন।
সরকারি চাকুরির পাশাপাশি সমাজসেবী ও সংগঠক হিসেবেও তাঁর খ্যাতি রয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও পার্শ্ববর্তী জেলাসমূহের গরীব, দুস্থ-সহায়-সম্বলহীন চক্ষুরোগীদের নামমাত্র/বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদানের লক্ষ্যে, চাঁপাইনবাবগঞ্জে একটি অত্যাধুনিক পূর্ণাঙ্গ চক্ষু হাসপাতাল নির্মাণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন খাদেমুল ইসলাম ফিকসন। বাংলাদেশ জাতীয় অন্ধকল্যাণ সমিতির (চাঁপাইনবাবগঞ্জ শাখা) উদ্যোগ গ্রহণের মধ্য দিয়ে ২০০০ সালে চক্ষু হাসপাতাল নির্মাণ প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই জাতীয় অন্ধকল্যাণ সমিতির প্রতিষ্ঠাতা-সাধারণ সম্পাদক (চাঁপাইনবাবগঞ্জ শাখা) হিসেবে খাদেমুল ইসলাম অদ্যাবধি অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ চক্ষু হাসপাতাল নির্মাণের এ মহৎ কাজে যাদের সহযোগিতা ছিল, তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন বিশিষ্ট চক্ষু বিশেষজ্ঞ-সার্জন ও সমাজসেবী ডা. আয়াজ উদ্দিন এবং বিশিষ্ট সমাজসেবী ও প্রকৌশলী প্রয়াত নজরুল ইসলাম সেন্টু এবং জাতীয় অন্ধকল্যাণ সমিতি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ শাখার প্রতিষ্ঠাতা-চেয়ারম্যান প্রয়াত প্রফেসর তরিকুল ইসলাম। এছাড়াও চক্ষু হাসপাতাল নির্মাণের জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার তৎকালীন চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট রাজনীতিক মঈনুদ্দিন মন্ডল প্রায় দেড় বিঘা জমি প্রদানের ব্যবস্থা করেন। উত্তরবঙ্গের বৃহত্তম এই চক্ষু হাসপাতালটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৬ মে ২০১৫ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সফরকালে শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
তিনি ঢাকাস্থ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সমিতির সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন সময়ে (১৯৯৯-২০০১ইং) জেলার তৎকালীন সরকারি গেজেটেড নাম ‘নবাবগঞ্জ জেলা’ কে ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জ’ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা নামকরণ বাস্তবায়ন কমিটির সমন্বয়কারীর ভূমিকায় ছিলেন প্রকৌশলী খাদেমুল ইসলাম ফিকসন। এই কমিটির আহŸায়ক ছিলেন বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক ও সমাজসেবী শফিকুল আলম ভোতা এবং সদস্য সচিব ছিলেন এ্যাড.আবু হাসিব।
১৯৯৯ সালে যখন পদ্মা নদীর ভয়াবহ ভাঙ্গনের ফলে তৎকালীন ‘নবাবগঞ্জ জেলা’ হুমকির মুখে পড়ে, তখন সমাজসেবী শফিকুল আলম ভোতার নেতৃত্বে ‘নবাবগঞ্জ জেলা নদী ভাংগন প্রতিরোধ সংগ্রাম কমিটির’ গড়ে ওঠে। কমিটির আন্দোলনের ফলে পদ্মা নদীর বামতীর সংরক্ষণ করতে সরকার বাধ্য হয়। এই জেলার মানুষ এবং জেলাটি নদী গর্ভে বিলীন হওয়া থেকে বেঁচে যায়। উল্লেখ্য, নবাবগঞ্জ জেলা নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধ সংগ্রাম কমিটির নেপথ্যে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন সমাজসেবী প্রকৌশলী খাদেমুল ইসলাম ফিকসন।
তিনি ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটশন বাংলাদেশ (আইইবি), রাজশাহী কেন্দ্রের ভাইস চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ে ২০০৭ সালে রাজশাহী নগরের বড় বনগ্রাম এলাকায় বাংলাদেশের প্রথম- প্রকৌশলীদের আবাসন প্রকল্প ‘প্রকৌশলী পল্লী’ প্রতিষ্ঠা করেন।
খাদেমুল ইসলাম ফিকসন ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন বাংলাদেশ (আইইবি), রাজশাহী কেন্দ্রের নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান এবং কেন্দ্রীয় কাউন্সিল সদস্য (২০০৭ইং), বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য (১৯৯৩ইং), চাঁপাইনবাবগঞ্জ চক্ষু হাসপাতালের অবৈতনিক পরিচালক, সতীর্থ-৭৪ (রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল) এর প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, রাজশাহী মহানগরীর আজীবন সদস্য, ন্যাশনাল হার্ট ফাউডেন্ডশন, রাজশাহী শাখার জনসংযোগ সম্পাদক (বর্তমান), বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সোসাইটি, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আজীবন সদস্য, প্রতিষ্ঠাতা-বিসিএস আনসার এ্যাসোসিয়েশন (১৯৯১), কিশোর কুড়ি মেলা, রাজশাহীর প্রতিষ্ঠাতা-সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনসহ চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীর বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক, সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত রয়েছেন।
তিনি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রজীবনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রগতিশীল রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে মতিহার থানা, রাজশাহী মহানগর, আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
১৯৮০ সালে তিনি শ্রেষ্ঠ সংগঠক হিসেবে জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন। স্বেচ্ছায় রক্তদাতা হিসেবে রেড ক্রিসেন্ট কর্তৃক সম্মাননা ও পুরস্কার লাভ করেন। বতর্মানে তিনি বাংলাদেশের ক্যাব অথাৎ কনজিউমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা (ভোক্তা অভিযোগ) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। {অসমাপ্ত……/ বিস্তারিত প্রকাশিতব্য গ্রন্থ- ‘আলোকিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ’ (চাঁপাইনবাবগঞ্জের দু’শো বছর ইতিহাসের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সংক্ষিপ্ত জীবনী)}