উপমহাদেশের প্রথিতযশা গণিত বিশারদ-শিক্ষাবিদ(পাটিগণিতে মেট্রিক পদ্ধতি প্রণয়নকারী), রাজশাহী সিটি কলেজ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য, সমাজসেবী-আলোকিত মানুষ ‘প্রফেসর আব্দুল করিম মন্ডল’ ১৮৯৬ সালের ১ মার্চ চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের তৎকালীন খামার (বর্তমান নামো-রাজারামপুর, কাজীপাড়া) গ্রামের এক অসচ্ছল কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মৌ. উজির ম-ল ও মাতা বেগম খাতুন নেসা। তৎকালীন বিখ্যাত রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলে আব্দুল করিমই প্রথম কোন মুসলমান ছাত্র যিনি প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেছিলেন। ১৯১৫ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে আই.এ (প্রথম বিভাগ) এবং ১৯১৮ সালে ডিস্টিংশনসহ বি.এ ডিগ্রী অর্জন করেন। পরবর্তীতে ১৯২১ সালে মেধাবী ছাত্র আব্দুল করিম কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিত শাস্ত্রে এম.এ (প্রথম বিভাগ) ডিগ্রী লাভ করেন।
রাজশাহী কলেজ, কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ, মহসিন কলেজ-হুগলী, ঢাকা কলেজসহ বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে অত্যান্ত সফলতা এবং সুনামের সাথে দীর্ঘ ২৭ বছর অধ্যাপনা করেন প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ‘প্রফেসর আব্দুল করিম ম-ল’। রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব থেকে অবসর গ্রহণের পর তিনি রাজশাহীর প্রখ্যাত রাজনীতিক, সমাজসেবী মাদার বখশ এবং আই.এইচ জুবেরি সাহেবের সঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে সবার অনুরোধে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দায়িত্ব (১৯৫৩-১৯৫৬) পালন করেন প্রফেসর আব্দুল করিম। বিশিষ্ট সমাজসেবী প্রফেসর আব্দুল করিম মন্ডলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় রাজশাহী সিটি কলেজ (১৯৫৮) প্রতিষ্ঠিত হয়। তৎকালীন রাজশাহীর গণ্যমান্য ব্যক্তিদের বিশেষ অনুরোধে রাজশাহী সিটি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা-অধ্যক্ষের দায়িত্বও তিনি পালন করেন। সেই সময়ে তিনি কোন সম্মানী কিংবা বেতন নেননি বরং কলেজের আসবাবপত্র ক্রয়সহ বিভিন্ন প্রকার সহযোগিতা দান করে কলেজটিকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে আপ্রাণ চেষ্টা করেন। রাজশাহী সিটি কলেজের অধ্যক্ষ থাকাকালীন অবস্থায় ১৯৫৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। উপমহাদেশের প্রথিতযশা ভাষাবিদ ড.মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ছিলেন তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু। মৃত্যুর পর তিনিই প্রফেসর আব্দুল করিমের জানাজা পড়ান।
উপমহাদেশের প্রথিতযশা গণিত বিশারদ ‘শ্রী যাদব চন্দ্র চক্রবর্তী’ এবং ‘শ্রী কালিপদ বসুর’ লিখিত গণিতসমূহকে বাদ দিয়ে (১৯৪৭ দেশ-বিভাগ পরবর্তী সময়ে) তৎকালীন পূর্ব পাকিস্থান স্কুল টেক্সট বুক বোর্ড প্রফেসর আব্দুল করিম মন্ডলের লিখিত গণিতসমূহকে অনুমোদন দিলে সারাদেশে উচ্চ বিদ্যালয়ে তা পঠিত হয় এবং জনপ্রিয়তা লাভ করে। এছাড়া তিনি উচ্চতর গণিতও প্রণয়ন করেন। বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, পাটিগণিত প্রণয়নের ইতিহাসে প্রখ্যাত গণিতবিদ ‘প্রফেসর আব্দুল করিমই’ সর্বপ্রথম ‘পাটিগণিতের মাধ্যমে মেট্রিক প্রণালী/পদ্ধতি (Metree System)’ প্রণয়ন করেন এবং সমগ্র বাংলায় ছাত্র-শিক্ষকদের মাঝে তা ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। গণিত বিষয়ক তাঁর সকল গ্রন্থ-পাঠ্যপুস্তকই সেই সময় জনপ্রিয়তা লাভ করে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা থেকে ২০০৩ সালে গুণি শিক্ষাবিদ ‘প্রফেসর আব্দুল করিম ম-লকে’ ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা শতবর্ষ পূর্তি উৎসব সম্মাননা’ প্রদান করা হয়। { অসমাপ্ত…/ বিস্তারিত প্রকাশিতব্য মূল গ্রন্থ- ‘আলোকিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ’ (চাঁপাইনবাবগঞ্জের দু’শো বছর ইতিহাসের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সংক্ষিপ্ত জীবনী)