আবদুল ওদুদ

Share With

‘মো.আবদুল ওদুদ’ বিশিষ্ট আইনজীবী, রাজনীতিক-সমাজসেবী। ডিফেন্স লইয়ার হিসেবে তাঁর খ্যাতি রয়েছে। বর্তমান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি), জেলা জজ কোর্ট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ। জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সেক্রেটারী জেনারেল ‘এড. আবদুল ওদুদ’ ১৯৫৭ সালের ৪ মার্চ চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের বাসুনিয়াপট্টি মহল্লার সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা প্রয়াত আলহাজ্ব ইব্রাহিম মুন্সী, মাতা প্রয়াত জাহান আরা বেগম। তাঁর দাদা আলহাজ্ব মাওলানা আব্দুল আজিজ ছিলেন অত্যন্ত পরহেজগার ব্যক্তি ও বিশিষ্ট আলেম। তিনি দেওবন্দ মাদ্রাসা (ভারত) থেকে ধর্মীয় শিক্ষা অর্জন করেন এবং ধর্মীয় নানা বিষয়ে লেখালেখি করতেন। তাঁদের আদিনিবাস ছিল চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নে। তাঁর নানা হলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলা নিবাসী কলিম উদ্দিন পন্ডিত। সাত ভাই ও চার বোনের মধ্যে আবদুল ওদুদ পিতা-মাতার নবম সন্তান। তাঁর ভাই-বোনেরা উচ্চ শিক্ষিত, স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। তাঁর বড় ভাই ডা. নজরুল ইসলাম, আরেক ভাই বুয়েটের অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম, তাঁর ভাই রবিউল ইসলাম সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগের আইনজীবী।

আবদুল ওদুদ ১৯৭২ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ১৯৭৫ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগ থেকে ১৯৮০ সালে অনার্স ও ১৯৮২ সালে মাস্টার্স ডিগ্রী (প্রথম) লাভ করেন। পরবর্তী সময়ে ১৯৮৫ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রী অর্জন করেন।

ওকালতীর প্রথম জীবনে ঢাকার প্রখ্যাত আইনজীবী গরীব নেওয়াজ এর অধীন শিক্ষানবিস হিসেবে ঢাকা জজ কোর্টে প্র্যাকটিস করেন। এরপর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা জজ কোর্টের প্রথিতযশা সিনিয়র আইনজীবী, ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ‘ওসমান গণি’ সাহেবের অধীন এবং পরবর্তী সময়ে আরেক খ্যাতিমান সিনিয়র আইনজীবী ‘এএফএম সুলতানুল ইসলাম মনি’ সাহেবের অধীনে দীর্ঘদিন জুনিয়রশীপ করেন। ১৯৮৬ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতিতে এবং ১৯৯৮ সালে ঢাকা সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হোন।

দীর্ঘ চার দশক ধরে তিনি আইনজীবী পেশায় অবদান রাখছেন। বহু গুরুত্বপূর্ণ মামলা পরিচালনা করে আসছেন। ২০১২ সালে তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সেক্রেটারী জেনারেল নির্বাচিত হোন। এর আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল নির্বাচিত হোন। সততা, সুনাম ও দক্ষতার সাথে তিনি এসব দায়িত্ব পালন করেন। সেই সময় তিনি লিগ্যাল এইড চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদস্য সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

কলেজ জীবনে জাতীয় সংসদের সাবেক উপনেতা, এমপি ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান, প্রথিতযশা রাজনীতিক ‘এহসান আলী খাঁন’ এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা, চাঁপাইনবাবগঞ্জের জনপ্রিয় রাজনীতিক, সাবেক পৌর চেয়ারম্যান ‘আব্দুল মান্নান সেন্টু’র সাহচর্যে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (জাসদ) এর রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হোন। পরবর্তী সময়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি এড. সুলতানুল ইসলাম মনির অনুপ্রেরণায় বিএনপিতে যোগদান করেন। ১৯৮৭ সালে তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তী সময়ে ১৯৯৭-২০০৩ পর্যন্ত দীর্ঘদিন চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৭ সালে তিনি জেলা বিএনপির সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের অন্যতম সদস্য।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার আইন উপদেষ্টা, এরফান গ্রুপের আইন উপদেষ্টা, উত্তরায়ণ সাংস্কৃতিক পরিষদের উপদেষ্টা, চাঁপাইনবাবগঞ্জের কোরআন ক্লাসের সাধারণ সম্পাদক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ক্লাবের আজীবন সদস্য, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সাধারণ পাঠাগারের আজীবন সদস্য, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ডায়াবেটিক সমিতির আজীবন সদস্য, ‘আলোকিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ ফাউন্ডেশন’ এর পৃষ্ঠপোষক সদস্য, পাঠানপাড়া ফুড অফিস জামে মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, টাউন জামে মসজিদের সদস্য, চাঁপাইনবাবগঞ্জ নাসিং ইন্সটিটিউট এন্ড হসপিটাল ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি বোর্ডের অন্যতম সদস্য, নবাবগঞ্জ দারুল হাদিস মাদ্রাসা, সেন্ট্রাল জামে মসজিদ, খালঘাট গোরস্থান ও ঈদগাহ কমিটির সহ-সভাপতি, ইতোপূর্বে তিনি সেন্ট্রাল জামে মসজিদের সভাপতিও ছিলেন। এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক-সেবামূলক প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করছেন।

ভালো বক্তা হিসেবে তাঁর সুনাম রয়েছে। বাংলাদেশ বার কাউন্সিল লিগ্যাল এডুকেশন এ্যান্ড ট্রেনিং ইন্সটিটিউটের মানবাধিকার প্রশিক্ষণ কর্মশালাসহ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সভা-সেমিনারে অংশগ্রহণ করে বক্তব্য রাখেন। তাঁর লেখা বিভিন্ন প্রবন্ধ-নিবন্ধ জেলা আইনজীবী সমিতির শতবর্ষ স্মরণিকাসহ স্থানীয় পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। মিয়ানমার, সৌদি আরব, ভারত প্রভৃতি দেশ ভ্রমন করেছেন। স্ব-স্ত্রীক হজ্বব্রত পালন করেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের পাঠানপাড়ায় বাড়ি করে বর্তমানে পরিবারসহ স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।

তাঁর সুযোগ্য স্ত্রী এড. লায়লা চৌধুরী চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রথম মহিলা আইনজীবী। লায়লা চৌধুরীর দাদা ‘সিরাজ উদ্দিন চৌধুরী’ ছিলেন জমিদার-জোতদার। ‘সিরাজ উদ্দিন চৌধুরী’ চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রথম কোন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, যিনি মুক্তিযুদ্ধে নিজ বাড়িতে পাকহানাদার বাহিনী কর্তৃক গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন, শহীদ হয়েছিলেন। লায়লা চৌধুরীর ভাই প্রফেসর ড. সিরাজুল করিম চৌধুরী রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) এর উপাচার্য (ভিসি) ছিলেন। লায়লা চৌধুরী সুপ্রিম কোর্টেরও তালিকাভুক্ত আইনজীবী। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা জজ কোর্টের লিগ্যাল এইড প্যানেল আইনজীবীর দায়িত্ব পালন করছেন। ব্লাস্ট আইনজীবী হিসেবে তিনি মানবাধিকার ও নারী অধিকার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। জেলা জজ কোর্টের এপিপি (১৯৯১-১৯৯৫) হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

তাঁদের দুই কন্যা সন্তান রয়েছে। সুযোগ্য সন্তান ডা. সাইকী ওদুদ {বিসিএস (স্বাস্থ্য), এমসিপিএস, এফসিপিএস,} চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ। বর্তমানে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সিভিল সার্জন অফিসে কর্মরত রয়েছেন। তাঁর স্বামী ডা.আহসান হাবীব {বিসিএস, (স্বাস্থ্য), এমসিপিএস, এমডি}, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট (রেডিওলজি এন্ড ইমেজিং) হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তাঁদের আরেক সুযোগ্য সন্তান সাইমী ওদুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রভাষক। মেধাবী সাইমী ওদুদ অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে বিসিএল ডিগ্রী সম্পন্ন করেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি গণমাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ে কলাম লিখছেন। ডেইলি স্টারের ‘ল এ্যান্ড আওয়ার রাইটস’ এর ইনচার্জ হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তাঁর স্বামী রাগীব মাহতাব, সিনিয়র সহকারী জজ, বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস। বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগের তথ্য ও গবেষণা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বরত।

আইনজীবী পেশায় ও মানবাধিকারে অবদান রাখায় ‘আবদুল ওদুদ’ বিভিন্ন সম্মাননা পেয়েছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির শতবর্ষ পূর্তি সম্মাননা (তৎকালীন মাননীয় প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিক এই সম্মাননা প্রদান করেন), বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কোরআন শিক্ষা সংস্থা, ঢাকা কর্তৃক ক্ব-রীয়ানা সার্টিফিকেট (১৯৯১), ঢাকার শেরে বাংলা একে ফজলুল হক গবেষণা পরিষদ থেকে সম্মাননা (২০১৮), আলোকিত বাংলার মুখ ফাউন্ডেশন সম্মাননা (২০১৭), নাচোল মহিলা কলেজ থেকে সম্মাননা (২০২৫), মাদার তেরেসা রিসার্চ ওয়েলফেয়ার কাউন্সিল থেকে সম্মাননা, বিচারক প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট থেকে সম্মাননা সার্টিফিকেট (বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের মাননীয় প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ এই সার্টিফিকেট প্রদান করেন), চাঁপাইনবাবগঞ্জ ডায়াবেটিক সমিতি থেকে সম্মাননা স্মারক (২০২৩) তাঁর উল্লেখযোগ্য সম্মাননা। { অসমাপ্ত…/ বিস্তারিত প্রকাশিতব্য গ্রন্থ- ‘আলোকিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ’ www.alokito-chapainawabganj.com (চাঁপাইনবাবগঞ্জের দু’শো বছর ইতিহাসের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সংক্ষিপ্ত জীবনী ১ম ও ২য় খণ্ড) লেখক- মাহবুবুল ইসলাম ইমন}