মহান ভাষা আন্দোলনের বীর সৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক- এ্যাড.মো.ওসমান গণি ১৩৩৬ বঙ্গাব্দের কার্তিক মাসে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা প্রয়াত আইয়ুব আলী ও মাতা প্রয়াত হাজেরা খাতুন। তিনি নারায়ণপুর প্রাইমারী স্কুল থেকে প্রাথমিক, শিবগঞ্জের হেমায়েত মেমোরিয়াল মাদ্রাসা (বর্তমানে দাদনচক হাইস্কুল) থেকে মাধ্যমিক, শিবগঞ্জের আদিনা ফজলুল হক কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে বি.এ, এম.এ এবং সেখান থেকেই এল.এল.বি ডিগ্রী লাভ করেন। বিশিষ্ট প্রবীণ আইনজীবী এ্যাড.ওসমান গণি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আইনজীবি সমিতির একাধিকবারের সভাপতি ছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ফজলুল হক’ হলের ছাত্রনেতা হিসেবে তৎকালীন সময়ে তিনি সুপরিচিত ছিলেন। মহান ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধসহ সকল প্রগতিশীল আন্দোলনে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ১৯৫২ এর মহান ভাষা আন্দোলনের প্রোক্ষপটে ‘ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিনের (ভাষা মতিন)’ সভাপতিত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গঠিত তৎকালীন ‘কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের’ তিনি ছিলেন অন্যতম সদস্য। বগুড়া, নাটোর, রাজশাহী জেলার শিার্থী অর্থাৎ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ছাত্র-ছাত্রীদের এ বিষয়ে সচেতন করা, ভাষা আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত করা প্রভৃতি দায়িত্বে নিযুক্ত ছিলেন ভাষা সৈনিক ওসমান গণি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৫ সদস্য বিশিষ্ট স্টিয়ারিং কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন এ্যাড.ওসমান গণি। অন্যান্য সদস্যরা ছিলেন ভাষা সৈনিক-গোলাম আরিফ টিপু, এ্যাড.রইস উদ্দিন আহমদ, ডা.আ.আ.ম. মেসবাহুল হক, সেরাজুল হক শনি মিয়া। পরে উক্ত সদস্য সংখ্যা ১০ এ উন্নীত করা হয়।
এ্যাড.ওসমান গণি হেমায়েত হাইস্কুলে পাঠরত অবস্থায় নারায়ণপুর গ্রামে স্থাপিত প্রাথমিক বিদ্যালয়টি নদী ভাঙ্গণে ভেঙে গেলে গ্রামের ছেলে মেয়েদের জন্য তিনি নিজ উদ্যোগে স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। তৎকালীন নারায়ণপুর এলাকায় মাধ্যমিক স্তরের জন্য কোন উচ্চ বিদ্যালয় না থাকায় ঐ অঞ্চলে যে এম.ই স্কুল ছিল, তা হাই স্কুলে উন্নীত করার জন্য ১৯৪৯ সালে নিজে একমাত্র শিক্ষক হিসেবে ৭ম শ্রেণী পর্যন্ত চালু করেন। ১৯৫৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিাজীবন শেষে শিানবিশ আইনজীবী হিসেবে ঢাকা হাইকোর্টে যোগদান করেন। কিছুদিন সেখানে প্র্যাকটিস করার পর চাঁপাইনবাবগঞ্জের নারারণপুরে ফিরে এসে শিকতা পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ ডায়াবেটিক সমিতির প্রতিষ্ঠায় (১৯৯৭) অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। পরবর্তীতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ডায়াবেটিক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের ইসলামপুর মহল্লায় স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা জজ কোর্টে তিনি আইন পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। বিশিষ্ট ভাষাসংগ্রামী ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক-এ্যাড.ওসমান গণিকে ১৯৯৬ সালে গ্রন্থ মেলায় ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসন গুণিজন সম্বর্ধনা’ এবং ২০১০ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ উত্তরায়ণ সাংস্কৃতিক পরিষদ থেকে সম্বর্ধনা দেয়া হয়। ব্যক্তিগত জীবনে চার ছেলে ও তিন মেয়ের জনক এ্যাড.ওসমান গণির স্ত্রীর নাম সায়েরা খাতুন। { অসমাপ্ত…/ বিস্তারিত প্রকাশিতব্য মূল গ্রন্থ- ‘আলোকিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ’ (চাঁপাইনবাবগঞ্জের দু’শো বছর ইতিহাসের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সংক্ষিপ্ত জীবনী) }