‘অধ্যাপক মুজিবুর রহমান’ একজন বিশিষ্ট রাজনীতিক-সমাজসেবী, সাবেক সংসদ সদস্য (রাজশাহী-১, গোদাগাড়ী-তানোর), শিক্ষক ও লেখক। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সিনিয়র নায়েবে আমীর ‘মুজিবুর রহমান’ ১৯৫৫ সালে তৎকালীন চাঁপাইনবাবগঞ্জের আলাতুলি ইউনিয়নের চর-আলাতুলি গ্রামের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা আলহাজ্ব সিরাজুল ইসলাম মোল্লা এবং মাতা হামিদা খাতুন। ৭০ এর দশকে নদী ভাঙ্গনের কারণে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আলাতুলি ইউনিয়নের চর-আলাতুলি গ্রাম থেকে পার্শ্ববর্তী রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার মহিশালবাড়ীর সাগরপাড়ায় তাঁর পিতা সিরাজুল ইসলাম মোল্লা স্থায়ীভাবে পরিবারসহ চলে আসেন।
‘মুজিবুর রহমান’ আলাতুলি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেন। ১৯৭০ সালে গোদাগাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় এসএসসি পাস করেন। এসএসসিতে রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডে মানবিক বিভাগ মেধা তালিকায় তৃতীয় স্থান অধিকার করেন। ১৯৭২ সালে রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরবর্তীতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজীতে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। এছাড়াও, তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন মর্ডান এ্যারাবিক সার্টিফিকেট কোর্স ও মর্ডান পার্সিয়ান সার্টিফিকেট কোর্সে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। ছাত্রজীবনে রচনা ও বক্তৃতা প্রতিযোগীতায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন।
ছাত্রজীবন শেষ করে বিসিএস পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হলেও তিনি এ্যাডমিন ক্যাডার না হয়ে শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার প্রেমতলী ডিগ্রী কলেজে ইংরেজির শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। বগুড়ার শিবগঞ্জ ডিগ্রী কলেজ ও নন্দীগ্রাম মনসুর হোসেন ডিগ্রী কলেজে ইংরেজী শিক্ষক হিসেবে দীর্ঘদিন অধ্যাপনা করেন। জমিয়তে আহলে হাদিসের যুব সংগঠন ‘আঞ্জুমানে সুববআনি আলহাদিস’ এর কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন মুজিবুর রহমান। যার উপদেষ্টা ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি (উপাচার্য) প্রফেসর ড. আব্দুল বারী। ‘মুজিবুর রহমান’ দীর্ঘদিন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতির দ্বায়িত্ব পালন করেন।
কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। তৎকালীন রাজশাহী মহানগর (পূবাঞ্চল) ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করেন। তৎকালীন বৃহত্তর রাজশাহী (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রাজশাহী-নওগাঁ-নাটোর) জেলা জামায়াতের সেক্রেটারী, পরবর্তীতে বৃহত্তর রাজশাহী জেলা জামায়াতের আমীর, জামায়াতের শিক্ষা বিভাগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি, কেন্দ্রীয় জামায়াতের নায়েবে আমীর প্রভৃতি দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৮৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িপাল্লা প্রতীক নিয়ে রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হোন। তৎকালীন জামায়াতে ইসলামীর ১০ সদস্যের সংসদীয় দলের নেতা হিসেবে তিনি জাতীয় সংসদে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মহান জাতীয় সংসদে নামাজের বিরতি তাঁর প্রস্তাবেই গৃহিত হয়। এছাড়াও , শোক প্রস্তাবের সাথে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের পরিবর্তে দোয়া/মোনাজাতের রীতিও চালু হয় মূলত তাঁর প্রস্তাবেই। ১৯৮৭ সালের ফেব্রুয়ারীতে জাতীয় সংসদে তিনি প্রস্তাবগুলো করেন এবং তখন থেকে এই রীতি চালু রয়েছে।
বর্তমানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সিনিয়র নায়েবে আমীর হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করছেন। কেন্দ্রীয় জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর হিসেবেও কিছুদিন (কেন্দ্রীয় জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান জেলে থাকাকালীন সময়) তিনি দায়িত্ব পালন করেন। রাজশাহী জেলার শিক্ষা বিস্তারে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। গোদাগাড়ী উপজেলার একমাত্র মহিলা ফাজিল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন সমাজসেবী মুজিবুর রহমান। গোদাগাড়ী উপজেলায় মহিশালবাড়ী আল ইসলাহ ইসলামী একাডেমী এবং তানোর উপজেলায় আল মাদ্রাসাতুল ইসলাহিয়া প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়াও রাজশাহীর গোদাগাড়ী ও তানোর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বেশকয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এতিমখানা ও মসজিদ স্থাপন করেন।
লেখক হিসেবেও তাঁর পরিচিতি রয়েছে। জাতীয় সংসদে জামায়াতে ইসলামী, কারাগার থেকে আদালত, সহজ কথায় ইসলাম, ইউরোপে একমাস, আল্লাহর পথে খরচ, নির্বাচিত এক হাজার হাদিস, আখিরাতের প্রস্তুতি, ইসলামী আচরণ প্রভৃতি তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। বাংলা একাডেমীর আজীবন সদস্য, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচিত সিনেট সদস্য, রাজশাহীর আল ইসলা ইসলামী ট্রাস্টের সভাপতিসহ ঢাকা, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন সামাজিক-সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত রয়েছেন।
পাঁচ ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি পিতা-মাতার তৃতীয় সন্তান। ১৯৭৯ সালে রাজশাহীর আলহাজ্ব জহুর আহমেদের কন্যা শরিফা বেগমের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হোন। তাঁদের দুই পুত্র ও দুই কন্যা সন্তান রয়েছে। তাঁদের সুযোগ্য পুত্র ডা. খালেদ সাইফুল্লাহ ফিনল্যান্ডে চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত। ডা. খালেদ সাইফুল্লাহ ফিনল্যান্ডের মুসলিম ফোরামের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। {অসমাপ্ত…/ বিস্তারিত প্রকাশিতব্য গ্রন্থ- ‘আলোকিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ’ www.alokito-chapainawabganj.com (চাঁপাইনবাবগঞ্জের দু’শো বছর ইতিহাসের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সংক্ষিপ্ত জীবনী ১ম ও ২য় খণ্ড) লেখক- মাহবুবুল ইসলাম ইমন}