সৈয়দ মামুন রশিদ

Share With
‘সৈয়দ মামুন রশিদ’ দেশের একজন মেধাবী ভাস্কর ও মৃৎ শিল্পী। ১৯৭৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের ফকিরপাড়া মহল্লায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা সৈয়দ আব্দুল্লাহ হারুন এবং মাতা শরীফা খাতুন। ছয় ভাইয়ের মধ্যে তিনি পিতা-মাতার তৃতীয় সন্তান।
‘সৈয়দ মামুন রশিদ’ ১৯৯৪ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের রাজারামপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ১৯৯৬ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। স্কুল-কলেজ জীবনে স্থানীয় চিত্রশিল্পী ‘আসরাফুল আম্বিয়া সাগর’ এর কাছে চারুকলার হাতেখড়ি নেন, তাঁর অধীনে বেশ কিছুদিন কাজ করেন। এভাবেই তিনি পড়ালেখা এবং চারুকলাকে পেশা হিসেবে বেছে নিতে অনুপ্রাণিত হোন। পরবর্তী সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউট থেকে অনার্স ও মাস্টা্স সম্পন্ন করেন।
‘সৈয়দ মামুন রশিদ’ বাংলাদেশের মৃৎ শিল্পে, ভাস্কর শিল্পী হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে অবদান রেখে চলেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় ১২ ফিটের রিজেনারেট পোড়া মাটির ভাস্কর্য নির্মাণ করে প্রসংশিত হোন। পরবর্তীতে সকল মাধ্যমে পুরস্কৃত হোন। পড়াশুনার পাশাপাশি পার্ট টাইম বিভিন্ন অডার, কমিশনভিত্তিক কাজ করেছেন। ঐতিহ্যবাহী রাজশাহী সরকারি কলেজে নির্মিত টেরাকোটার দৈর্ঘ্য ৪০ ফুট ও প্রস্থ ৫ ফুট ‘উদয়-অস্ত বাংলাদেশ’ এর শিল্পী সৈয়দ মামুন রশিদ। অসাধারণ এই কাজের মাধ্যমে উঠে এসেছে বাংলাদেশের বিবর্তন ও পরিবর্তনের ঐতিহাসিক মুহূর্তগুলো। নির্মাণশৈলীর দিক দিয়ে স্থাপনাটি এক অনন্য নিদর্শন। টেরাকোটার ক্যানভাসে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ১৯৪৭’র দেশ ভাগ, ১৯৫২’র ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলনসহ পরবর্তী ১৯৬৯’র গণঅভ্যুত্থান। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ, জাতির পিতার ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, অস্থায়ী সরকারের শপথগ্রহণ এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ও ৩ নভেম্বরের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ইতিহাস ফুটে উঠেছে এই টেরাকোটায়। এছাড়াও তাঁর হাতে তৈরি ছোট-বড় অনেকগুলো ভাস্কর্য ও টেরাকোটা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী কলেজে এখনো শোভা পাচ্ছে।
প্রখ্যাত ভাস্কর ও মৃৎ শিল্পী ‘মৃনাল হক’ এর সাথে কাজের অভিজ্ঞতাও তাঁর রয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের বারোঘরিয়ার ‘স্বাধীনতা প্রতিরোধ স্তম্ভে’ মৃনাল হকের সাথে তিনি কাজ করেছেন, অবদান রেখেছেন। দেশের বাইরে অস্ট্রেলিয়ার সিডনীতে টেরাকোটা, বাংলাদেশের গণভবন, বঙ্গভবন, আর্মি হেড কোয়ার্টার ক্যান্টনমেন্ট, গল্ফ ক্লাবসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অফিসে তিনি বিভিন্ন ভাস্কর্য ও টেরাকোটা নির্মাণ করেছেন।
ভাস্কর শিল্পী হিসেবে মাছরাঙা টেলিভিশন, এটিএন বাংলাসহ বেশ কিছু টেলিভিশনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়েছেন। দেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় তাঁর স্বাক্ষাতকার প্রকাশিত হয়েছে। জাতীয় পর্যায়ে তিনি শিল্পকলা একাডেমী থেকে নয় বার যৌথ চারুকলা প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেন। ২০০৭ সালে শিল্পকলা জয়নাল আবেদিন পুরস্কারে ভূষিত হোন। সৈয়দ মামুনের কাজে রয়েছে নিজস্বতা, সৃজনশীলতার ছাপ। একাডেমিক থিউরির বাইরেও তিনি নিজের স্টাইলে ভাস্কর্য নির্মাণ করে থাকেন।
২০১৯ সালে নিজস্ব উদ্যোগে জাতীয় পর্যায়ে ঢাকায় গড়ে তুলেছেন ‘রাঢ়’ নামের একটি নতুন ধারার শৈল্পিক প্রতিষ্ঠান। তাঁর এই প্রতিষ্ঠানটি শিল্পকলায় অবদান রাখছে। { অসমাপ্ত……/ বিস্তারিত প্রকাশিতব্য গ্রন্থ- ‘আলোকিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ’ www.alokito-chapainawabganj.com (চাঁপাইনবাবগঞ্জের দু’শো বছর ইতিহাসের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সংক্ষিপ্ত জীবনী ১ম ও ২য় খণ্ড) লেখক- মাহবুবুল ইসলাম ইমন}