উপমহাদেশের প্রখ্যাত রাজনীতিক, ঐতিহাসিক তেভাগা আন্দোলনের নেত্রী, কিংবদন্তি- ইলা মিত্র ১৯২৫ সালে ভারতের কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৫ সালে ইলা মিত্র বিয়ে করেন প্রখ্যাত রাজনীতিক, মানবতাবাদী কমরেড রমেন্দ্রনাথ মিত্র ওরফে রমেন মিত্র (হাবু বাবু) কে। ইলামিত্রের শ্বশুরবাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুরহাটে। ইলা মিত্রের শ্বশুর-মহেন্দ্রনাথ মিত্র (দেওয়ান) ছিলেন তৎকালীন সময়ের স্বনামধন্য জোতদার। রাজনৈতিকভাবে রমেন মিত্র ও ইলা মিত্র দু’জনেই ছিলেন তৎকালীন কমিউনিস্ট পার্টির সক্রিয় সদস্য, অন্যতম কমরেড। ঐতিহাসিক তেভাগা-কৃষক আন্দোলনে ইলা মিত্রের পরামর্শক এবং উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করতেন তাঁর স্বামী, সহযোদ্ধা রমেন্দ্রনাথ মিত্র। ইলা মিত্র অত্যন্ত উদ্যোমী ও পরিশ্রমী একজন নারী ছিলেন। তিনি বসে থাকতে পারতেন না, তাই বিয়ের পরও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ‘কৃষ্ণগোবিন্দপুর স্কুলে’ বিনা সম্মানীতে শিক্ষকতার কাজ নিয়েছিলেন।
জমিদার কর্র্র্র্তৃক লাঞ্চিত, বঞ্চিত, অবহেলিত খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ, কৃষক-শ্রমিক জনতাকে তাঁদের নায্য অধিকার পাইয়ে দেয়াই ছিল ইলা-রমেন মিত্রের রাজনৈতিক সংগ্রাম, জীবনের মূলত লক্ষ্য। মাত্র দুই বছরের শিশু সন্তান রণেন মিত্র ওরফে মোহনকে রামচন্দ্রপুরের গ্রামের বাসায় রেখে ইলা মিত্র প্রায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে চলে যেতেন এবং রাত-দিন সাঁওতাল পল্লীতে ঘুরে ঘুরে তাঁদের (সাঁওতালদের) অধিকার সচেতন করে বিভিন্ন সহযোগিতা করতেন। নাচোলের দরিদ্র কৃষক ও সাঁওতালদেও কাছে তিনি ছিলেন ‘রাণী মা’। ক্রমশ তিনি তাঁদের হৃদয়ের গভীরে স্থান করে নিয়েছিলেন। ইলা মিত্র তাঁর রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকান্ড দ্বারা পরিণত হন তৎকালীন সময়ে জীবন্ত এক কিংবদন্তিতে।
সাঁওতাল বিদ্রোহের শেষের দিকে ইলা মিত্র সাঁওতাল যুবতীর ছদ্মবেশে পালিয়ে যাবার সময় চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরের রহনপুর রেলস্টেশনে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলে রমেন মিত্ররা আত্মগোপনে চলে যান। সেই সময় তাঁদের পার্টিও নিষিদ্ধ হয়েছিল। ১৯৫০ সালের শেষ দিক হতে ১৯৫১ সালের প্রথম দিক পর্যন্ত বিচারকার্য পরিচালিত হয়েছিল। বিচারে ইলা মিত্র এবং তাঁর সহকর্মী আজহার হোসেন, অনিমেষ লাহিড়ী ও মাতলা মাঝির ২০ বছর করে জেল হয়েছিল। উল্লেখ্য, নাচোলে যে হত্যাকা- ঘটে গিয়েছিল তা নেহাৎই একটা দুর্ঘটনা, যা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রখ্যাত পরিচালক সৈয়দ অহিদুজ্জামান ডায়মন্ড (চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃতি সন্তান) তাঁর বিখ্যাত ‘নাচোলের রাণী’ সিনেমায় দেখানোর চেষ্টা করেছেন। গ্রেফতারের পর ইলামিত্রের উপর যে পৈশাচিক ও বর্বরোচিত নির্যাতন করা হয়েছিল, ইতিহাসের পাতায় তা জঘন্যতম ঘটনা হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। বিচার শুরুর পূর্বে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ও তাঁর উপর পৈশাচিক নির্যাতন সম্পর্কে নি¤œ আদালতে ইংরেজি ভাষায় লিখিত জবানবন্দি পেশ করেন। যা ইতিহাসে ইলা মিত্রের ঐতিহাসিক জবানবন্দি নামেই পরিচিত। বিচার কার্য শেষে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের রায় প্রদানের পর কমরেড ইলা মিত্রকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের এক নির্জন সেলে রাখা হয়। তাঁর মুক্তির দাবিতে মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীসহ বিভিন্নমহল সোচ্চার হলেও মুসলিম লীগ সরকার কোন কর্ণপাত করেননি। এর কিছুদিন পরেই ১৯৫৪ সালের মার্চ মাসে পূর্ববঙ্গ ব্যবস্থাপক পরিষদের নির্বাচনে হক-ভাসানী-সোহরাওয়ার্দী যুক্তফ্রন্ট বিপুল সংখ্যক ভোটে বিজয় লাভ কওে, মুসলিম লীগ সরকারের পতন ঘটে এবং যুক্তফ্রন্টের নেতা শেরেবাংলা এ.কে ফজলুল হক মুখ্যমন্ত্রীর পদে অধিষ্ঠিত হন। একপর্যায়ে বিভিন্ন ব্যক্তি, সংগঠনের আন্তরিক প্রচেষ্টায় ইলা মিত্র প্যারোলে মুক্তি পান। প্যারলে মুক্তি লাভের পর ১৯৫৪-৫৫ সালের দিকে রমেন-ইলা মিত্ররা চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে কলকাতায় চলে যান।
বর্ণাঢ্য ও সফল রাজনৈতিক জীবনে ইলা মিত্র ভারতের পশ্চিমবঙ্গ বিধান সভার পরপর চারবার সদস্য এবং দু’বার বিধান সভায় কমিউনিস্ট পার্টির ডেপুটি লিডার হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। নারী জাগরণের অগ্রদূত, মহিয়সী নারী ইলা মিত্র শিক্ষা আন্দোলনে এবং নারী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ-প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ তথা পূর্ব বাংলা (বাংলাদেশ) ছেড়ে যাবার প্রায় ৪২ বছর পর ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দের ৪ নভেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশে এসেছিলেন ইলা মিত্র। তে-ভাগা আন্দোলনের ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ইলা মিত্রকে ১৯৯৬ সালের ৪ নভেম্বর ঢাকায় প্রাণঢালা সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা হয়। ঐ মাসের ৬ তারিখ সকালে রাজশাহীর ভূবন মোহন পার্কে এবং দুপুর ২টার দিকে তাঁর স্মৃতিবিজড়িত স্থান নাচোল কলেজ মাঠে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা হয়। সেখানে গ্রাম গ্রামান্তর থেকে আসা হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। তাঁদের ‘রাণী মা’র আগমনে নাচোল অঞ্চলের অধিবাসীরা আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। নির্যাতিত, বঞ্চিত ও অবহেলিত মেহনতী মানুষের অধিকার আদায়ের প্রখ্যাত সংগ্রামী নেত্রী, কিংবদন্তি- কমরেড ইলা মিত্র ২০০২ সালের ১৩ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন। { অসমাপ্ত…/ বিস্তারিত প্রকাশিতব্য মূল গ্রন্থ- ‘আলোকিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ’ (চাঁপাইনবাবগঞ্জের দু’শো বছর ইতিহাসের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সংক্ষপ্তি জীবনী) }
জমিদার কর্র্র্র্তৃক লাঞ্চিত, বঞ্চিত, অবহেলিত খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ, কৃষক-শ্রমিক জনতাকে তাঁদের নায্য অধিকার পাইয়ে দেয়াই ছিল ইলা-রমেন মিত্রের রাজনৈতিক সংগ্রাম, জীবনের মূলত লক্ষ্য। মাত্র দুই বছরের শিশু সন্তান রণেন মিত্র ওরফে মোহনকে রামচন্দ্রপুরের গ্রামের বাসায় রেখে ইলা মিত্র প্রায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে চলে যেতেন এবং রাত-দিন সাঁওতাল পল্লীতে ঘুরে ঘুরে তাঁদের (সাঁওতালদের) অধিকার সচেতন করে বিভিন্ন সহযোগিতা করতেন। নাচোলের দরিদ্র কৃষক ও সাঁওতালদেও কাছে তিনি ছিলেন ‘রাণী মা’। ক্রমশ তিনি তাঁদের হৃদয়ের গভীরে স্থান করে নিয়েছিলেন। ইলা মিত্র তাঁর রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকান্ড দ্বারা পরিণত হন তৎকালীন সময়ে জীবন্ত এক কিংবদন্তিতে।
সাঁওতাল বিদ্রোহের শেষের দিকে ইলা মিত্র সাঁওতাল যুবতীর ছদ্মবেশে পালিয়ে যাবার সময় চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরের রহনপুর রেলস্টেশনে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলে রমেন মিত্ররা আত্মগোপনে চলে যান। সেই সময় তাঁদের পার্টিও নিষিদ্ধ হয়েছিল। ১৯৫০ সালের শেষ দিক হতে ১৯৫১ সালের প্রথম দিক পর্যন্ত বিচারকার্য পরিচালিত হয়েছিল। বিচারে ইলা মিত্র এবং তাঁর সহকর্মী আজহার হোসেন, অনিমেষ লাহিড়ী ও মাতলা মাঝির ২০ বছর করে জেল হয়েছিল। উল্লেখ্য, নাচোলে যে হত্যাকা- ঘটে গিয়েছিল তা নেহাৎই একটা দুর্ঘটনা, যা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রখ্যাত পরিচালক সৈয়দ অহিদুজ্জামান ডায়মন্ড (চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃতি সন্তান) তাঁর বিখ্যাত ‘নাচোলের রাণী’ সিনেমায় দেখানোর চেষ্টা করেছেন। গ্রেফতারের পর ইলামিত্রের উপর যে পৈশাচিক ও বর্বরোচিত নির্যাতন করা হয়েছিল, ইতিহাসের পাতায় তা জঘন্যতম ঘটনা হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। বিচার শুরুর পূর্বে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ও তাঁর উপর পৈশাচিক নির্যাতন সম্পর্কে নি¤œ আদালতে ইংরেজি ভাষায় লিখিত জবানবন্দি পেশ করেন। যা ইতিহাসে ইলা মিত্রের ঐতিহাসিক জবানবন্দি নামেই পরিচিত। বিচার কার্য শেষে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের রায় প্রদানের পর কমরেড ইলা মিত্রকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের এক নির্জন সেলে রাখা হয়। তাঁর মুক্তির দাবিতে মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীসহ বিভিন্নমহল সোচ্চার হলেও মুসলিম লীগ সরকার কোন কর্ণপাত করেননি। এর কিছুদিন পরেই ১৯৫৪ সালের মার্চ মাসে পূর্ববঙ্গ ব্যবস্থাপক পরিষদের নির্বাচনে হক-ভাসানী-সোহরাওয়ার্দী যুক্তফ্রন্ট বিপুল সংখ্যক ভোটে বিজয় লাভ কওে, মুসলিম লীগ সরকারের পতন ঘটে এবং যুক্তফ্রন্টের নেতা শেরেবাংলা এ.কে ফজলুল হক মুখ্যমন্ত্রীর পদে অধিষ্ঠিত হন। একপর্যায়ে বিভিন্ন ব্যক্তি, সংগঠনের আন্তরিক প্রচেষ্টায় ইলা মিত্র প্যারোলে মুক্তি পান। প্যারলে মুক্তি লাভের পর ১৯৫৪-৫৫ সালের দিকে রমেন-ইলা মিত্ররা চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে কলকাতায় চলে যান।
বর্ণাঢ্য ও সফল রাজনৈতিক জীবনে ইলা মিত্র ভারতের পশ্চিমবঙ্গ বিধান সভার পরপর চারবার সদস্য এবং দু’বার বিধান সভায় কমিউনিস্ট পার্টির ডেপুটি লিডার হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। নারী জাগরণের অগ্রদূত, মহিয়সী নারী ইলা মিত্র শিক্ষা আন্দোলনে এবং নারী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ-প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ তথা পূর্ব বাংলা (বাংলাদেশ) ছেড়ে যাবার প্রায় ৪২ বছর পর ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দের ৪ নভেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশে এসেছিলেন ইলা মিত্র। তে-ভাগা আন্দোলনের ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ইলা মিত্রকে ১৯৯৬ সালের ৪ নভেম্বর ঢাকায় প্রাণঢালা সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা হয়। ঐ মাসের ৬ তারিখ সকালে রাজশাহীর ভূবন মোহন পার্কে এবং দুপুর ২টার দিকে তাঁর স্মৃতিবিজড়িত স্থান নাচোল কলেজ মাঠে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা হয়। সেখানে গ্রাম গ্রামান্তর থেকে আসা হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। তাঁদের ‘রাণী মা’র আগমনে নাচোল অঞ্চলের অধিবাসীরা আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। নির্যাতিত, বঞ্চিত ও অবহেলিত মেহনতী মানুষের অধিকার আদায়ের প্রখ্যাত সংগ্রামী নেত্রী, কিংবদন্তি- কমরেড ইলা মিত্র ২০০২ সালের ১৩ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন। { অসমাপ্ত…/ বিস্তারিত প্রকাশিতব্য মূল গ্রন্থ- ‘আলোকিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ’ (চাঁপাইনবাবগঞ্জের দু’শো বছর ইতিহাসের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সংক্ষপ্তি জীবনী) }