বাংলাদেশের প্রখ্যাত রাজনীতিক, বিশিষ্ট সমাজসেবী ও আলোকিত মানুষ- কর্মবীর ইদ্রিস আহমদ ১৮৯৪ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার দাদনচক গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা হাজী নাহার উদ্দিন এবং মাতা তুলন বিবি। অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ইদ্রিস আহমদ ১৯১৩ সালে মুর্শিদাবাদের নিমতিতা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে এন্ট্রাস (এস.এস.সি), ১৯১৫ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে এফ.এ (এইচ.এস.সি) এবং ১৯১৭ সালে ডিস্টিংশনসহ প্রথম শ্রেণীতে বি.এ পাশ করেন । সেই সময় ডিস্টিংশনসহ প্রথম শ্রেণীতে বি.এ পাশ একটি বিরল ঘটনা। মেধাবী ছাত্র হিসেবে রাজশাহী কলেজ থেকে তিনি সেই সময় সংবর্ধনাও লাভ করেন।
নবাব বাহাদুর কর্তৃক প্রস্তাবিত ট্রায়াল ম্যাজিস্ট্রেট এর চাকুরি গ্রহণ না করে রাজনীতি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলাসহ বিভিন্ন জনহিতকর, সমাজসেবামূলক কাজের সাথে যুক্ত হয়ে পড়েন তিনি। ১৯২৪ সালে শিবগঞ্জের দুর্লভপুর ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্ট, পরবর্তীতে মালদহ জেলা বোর্ড, লোকাল বোর্ডের সদস্য এবং ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। উপমহাদেশের প্রখ্যাত রাজনীতিক ও অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী- শের-ই-বাংলা এ.কে ফজলুল হকের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ, আস্থাভাজন নেতা ছিলেন ইদ্রিস আহমদ। কৃষক প্রজাপার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও আঞ্চলিক নেতা ইদ্রিস আহমদ ১৯৩৭ সালে আইনসভার নির্বাচনে দক্ষিণ মালদহ আসনে মুসলিম লীগের প্রভাবশালী প্রার্থীকে বিপুল ভোটের পরাজিত করে আইন সভার সদস্য নির্বাচিত হন। দেশ-বিভাগের পর ১৯৪৮ সালে তিনি রাজশাহী জেলা বোর্ডের সদস্য নির্বাচিত হন। যুক্তফ্রন্ট এর প্রার্থী হিসেবে ১৯৫৪ সালে দ্বিতীয়বারের মতো প্রােদশিক আইন পরিষদ সদস্য (এম.এল.এ) নির্বাচিত হন। এ নির্বাচনে জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী সাহেব ইদ্রিস আহমদের পক্ষে ব্যাপক প্রচারাভিযান চালান।
শিক্ষাহিতৈষী ও সমাজসেবী ইদ্রিস আহমদ ১৯১০ সালে শিবগঞ্জের দাদনচক বেল আফরোজ ইদ্রিশী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ১৯১৯ সালে হেমায়েত মেমোরিয়াল হাই স্কুল, ১৯৩৮ সালে আদিনা ফজলুল হক কলেজ (চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রথম কলেজ), দাদনচক ফজলুল হক পি.টি.আই, দাদনচক ইন্ডাস্ট্রি স্কুল, কলেজিয়েট স্কুলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে করেন। তৎকালীন প্রাদেশিক প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে তিনি ১৯৫৬ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের সাথে সরকারের পক্ষে জমি একুয়ার করাসহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। পরবর্তীতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’বার জ্যেষ্ঠতম সিনেট সদস্য নির্বাচিত হন।
সমাজসেবা আর রাজনীতির পাশাপাশি সাহিত্যকর্ম ও সাংবাদিকতা করে সেই সময় সুনাম অর্জন করেন ইদ্রিস আহমদ। তাঁর রচিত অনেকগুলো সৃষ্টিশীল, গবেষণাধর্মী প্রকাশিত-অপ্রকাশিত গ্রন্থ রয়েছে। ইসলাম সংগীত, পতিত ইসলাম, মোসলেম অভাব, বংগ দেশের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, কৃষকের মর্মবাণী, লাক্ষা আবাদ, মানুষ না মেথর, জবা (উপন্যাস), লাল গোলাপ (উপন্যাস), তিন তালাকে বিপত্তি (উপন্যাস) প্রভৃতি তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ । এছাড়া তিনি ছাত্রাবস্থা থেকেই বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি, পরবর্তীতে বিভিন্ন খ্যাতনাম পত্রিকার সম্পাদনাও করেন। প্রখ্যাত সমাজসেবী, কর্মবীর ইদ্রিস আহমদ ১৯৬৬ সালের ৯ অক্টোবর মৃত্যবরণ করেন। {অসমাপ্ত…/বিস্তারিত প্রকাশিতব্য মূল গ্রন্থ- ‘আলোকিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ’ (চাঁপাইনবাবগঞ্জের দু’শো বছর ইতিহাসের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সংক্ষপ্তি জীবনী) }