আতাউর রহমান

উপমহাদেশের প্রখ্যাত কূটনীতিক, পাকিস্তানের প্রথম বাঙালি রাষ্ট্রদূত মো.আতাউর রহমান ১৯২৪ সালের ১ আগস্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার সত্রাজিতপুরের চন্ডীপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মাওলানা হেদায়েতুল্লাহ ছিলেন সেই সময়ের বিখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব। আতাউর রহমান ১৯৪০ সালে মালদহ জেলা স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন, ১৯৪২ সালে রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে ইন্টারমিডিয়েট এবং ১৯৪৪ সালে বি.এস.সি (প্রথম বিভাগ) ডিগ্রী অর্জন করেন। পরবর্তীতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করে ১৯৪৭ সালে এল.এল.বি ডিগ্রী অর্জন করেন। সেই সময় ভালো ফলাফলের জন্য স্বর্ণ পদকে ভূষিত হন মেধাবী ছাত্র মো.আতাউর রহমান।
১৯৪৮ সালে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে তিনি পাকিস্তান পুলিশ বাহিনীতে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৪৯ সালে সেন্ট্রাল সুপিরিয়র সার্ভিস পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়ে পাকিস্তান ফরেন সার্ভিসে যোগদান করেন। পরীক্ষায় মেধানুসারে শীর্ষ দশের মধ্যে তিনি দ্বিতীয় এবং বাঙালিদের মধ্যে প্রথম স্থান লাভ করেন। পরবর্তীতে তিনি বার্মা, ইটালী, ইরান, তুরস্ক, সৌদি আরব, ভারত এবং জার্মানীতে পাকিস্তানের মিশনে কূটনৈতিক দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৯-৭১ সালে সুদান, ইথিওপিয়া এবং সোমালিয়ায় পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সেটিই কোন বাঙালির পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত হিসেবে প্রথম নিয়োগ লাভ। বাঙালি ক্যারিয়ার ডিপ্লোম্যাট হিসেবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত হয়ে বিরল কৃতিত্ব অর্জন করেছিলেন প্রখ্যাত কূটনীতিক মো.আতাউর রহমান। ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মুজিবনগর বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে তাঁর ঘনিষ্ট বন্ধু কলকাতাস্থ বাংলাদেশ মিশনের প্রধান হোসেন আলির কাছে ইসলামাবাদে যাবার নির্দেশের প্রেক্ষিতে পরামর্শ চান। তিনি বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে পরামর্শ দেন, তিনি যেন ইসলামাবাদ হয়ে জেদ্দায় ইসলামী শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেন। সেখানে গিয়ে পাকিস্তান সরকারের সাথে সম্পর্ক ত্যাগ করে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্যের ঘোষণা দেন।তার সারা জীবনের যাত্রায়, তিনি জানতেন যে তিনি কী চান, এবং ঠিক এই ধরনের লোকেরাই জয়ী হয় บิงโก ออนไลน์ เงิน จริง অতএব, বড় কুশের জন্য যারা ঝুঁকি নিতে সাহস করে না তাদের চেয়ে বেঁচে থাকা তার পক্ষে কিছুটা সহজ ছিল।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহা-পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। পরবর্তীতে বাংলাদেশের বিশেষ দূত হিসেবে তাঁকে মধ্যপ্রাচ্যের কট্টর দেশগুলোর স্বীকৃতি আদায়ের জন্য মিশনে পাঠানো হয়। মূলত: তাঁর সফল দূতিয়ালির কারণেই লেবানন সরকার বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। সৌদি আরব এবং লিবিয়া ব্যতীত অন্যান্য দেশগুলো প্রদত্ত প্রতিশ্রুতিনুযায়ী ক্রমান্বয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি প্রদান করে। মো. আতাউর রহমান ১৯৭৩ হতে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত মিশর, সিরিয়া, ইথিওপিয়া, সাইপ্রাস এবং সুদানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৬ সাল হতে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত কানাডায় বাংলাদেশ হাইকমিশনার, কিউবায় রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮১ সালে তিনি অবসরগ্রহণ করেন। উপমহাদেশের প্রখ্যাত কূটনীতিক, সফল রাষ্ট্রদূত আতাউর রহমান ১৯৯১ সালের ২৩ মার্চ মৃত্যুবরণ করেন। পৈত্রিক নিবাস চন্ডিপুরে তাঁকে সমাহিত করা হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা থেকে ২০০৩ সালে কৃতি এই ব্যক্তিকে ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা শতবর্ষ পূর্তি উৎসব সম্মাননা’ প্রদান করা হয়। ব্যক্তিগত জীবনে দুই ছেলে ও দুই মেয়ের জনক আতাউর রহমানের স্ত্রীর নাম সুরাইয়া বেগম। তাঁদের সুযোগ্য সন্তান ‘কামাল রহমান’ ইংল্যান্ড থেকে বি.এস.সি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বি.এস.আই.ই এবং এম.বি.এ্র ডিগ্রী লাভ করেন। দেশের অন্যতম ব্যবসায়ী-শিল্পপতি হিসেবে ‘কামাল রহমান’ ইতিমধ্যেই সুনাম অর্জন করেছেন। {অসমাপ্ত……/ বিস্তারিত প্রকাশিতব্য গ্রন্থ- ‘আলোকিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ’ www.alokito-chapainawabganj.com (চাঁপাইনবাবগঞ্জের দু’শো বছর ইতিহাসের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সংক্ষিপ্ত জীবনী-১ম ও ২য় খণ্ড), লেখক- মাহবুবুল ইসলাম ইমন}