জহুরুল হক

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন-প্রথিতযশা বিজ্ঞানী, সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ- এমেরিটাস প্রফেসর ড.জহুরুল হক ১৯২৩ সালের ১ মার্চ চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের রাজারামপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম এ্যাড.তোবারক আলী। প্রফেসর ড.জহুরুল হকের মামা এ্যাড.নজমুল হক তৎকালীন মালদহর প্রখ্যাত আইনজীবী এবং পরবর্তীতে পাকিস্তান প্রাদেশিক সংসদের ডেপুটি স্পিকার হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। প্রফেসর জহুরুল হক দীর্ঘদিন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) অধ্যাপনা করেন। তৎকালীন সময়ে বেশ কয়েকবার তাঁকে বুয়েটের ‘উপাচাযর্’ করার উদ্যোগ নেয়া হলেও তাঁর অপরাগতা এবং রাজনীতিতে অনিহার কারণে তাঁকে আর উপাচার্য করা সম্ভব হয়নি। অসাধারণ ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন ড. হক শিক্ষা, সাহিত্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেছেন।
ড.জহুরুল হক বাংলা ভাষায় প্রকৌশল ও প্রকৌশলী শব্দ চালুসহ বহু বিদেশী ভাবানুবাদমূলক শব্দের প্রবর্তক।অনুবাদ গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-আলো, একালের জীবজন্তু, তাপ, বিজলীর খেলা, মাটি, মাধ্যাকর্ষণ, শব্দের খেলা, প্রভৃতি। মৌলিক গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য আগুন-পানির কথা, জীবন ও বিজ্ঞান, বিজ্ঞান নিয়ত সঙ্গী, মানুষের শক্তি প্রভৃতি। অনুবাদ গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য- আবিষ্কারের গোড়ায় যারা, খেলতে খেলতে বিজ্ঞান, বিজ্ঞানের খেলাঘর প্রভৃতি। বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের উচ্চতর ক্লাসের পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্রছাত্রীদের জন্য তিনি বেশ কিছু পাঠ্যপুস্তকও রচনা করেন। বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত ড.হক রচিত ‘তড়িৎ কৌশল পরিচয়’ বিশেষভাবে সমাদৃত একটি গ্রন্থ।
বাংলায় বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে প্রফেসর ড.জহুরুল হক বিশাল সময় জুড়ে একনিষ্ঠভাবে বিজ্ঞান চর্চা করে গেছেন, যা এক বিরল দৃষ্টান্ত। বাংলা একাডেমী তাঁকে বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত করেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা থেকে ২০০৩ সালে গুণি এই ব্যক্তিকে ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা শতবর্ষ পূর্তি উৎসব সম্মাননা’ প্রদান করা হয়। ইউনেস্কো পুরস্কারসহ কয়েকটি আন্তর্জাতিক পুরস্কারছাড়াও সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার ‘স্বাধীনতা পদক’ লাভ করেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রখ্যাত বিজ্ঞানী, কিংবদন্তি- প্রফেসর ড.জহুরুল হক । দেশ ও জাতির সম্পদ, গুণি বুদ্ধিজীবী– প্রফেসর ড.জহুরুল হককে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ‘এমেরিটাস প্রফেসর’ হিসেবে সম্মানিত করেন। ১৯৯৮ সালের ১৫ নভেম্বর প্রথিতযশা বিজ্ঞানী, সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ- এমেরিটাস প্রফেসর ড.জহুরুল হক মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুর পর বাংলা একাডেমী শোকসভার আয়োজন করে এবং বাংলাদেশের প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবী, পদার্থবিজ্ঞানী, বুয়েটের অধ্যাপক ড.আলী আসগর তাঁর স্মরণে তৎকালীন দৈনিক জনকণ্ঠে প্রবন্ধ লিখেন। { অসমাপ্ত…/ বিস্তারিত প্রকাশিতব্য মূল গ্রন্থ- ‘আলোকিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ’ (চাঁপাইনবাবগঞ্জের দু’শো বছর ইতিহাসের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সংক্ষপ্তি জীবনী) }