আমিনুল হক ওরফে `নায়ক আমিন’

বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি, একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রখ্যাত নাট্য-চলচ্চিত্র অভিনেতা, নির্দেশক- আমিনুল হক ওরফে `নায়ক আমিন’ ১৯২১ সালের ১ জুলাই তৎকালীন মালদহ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও ভারতের কিছু অংশ) জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালের দেশ-বিভাগ পরবর্তী সময়ে তাঁর পিতা মো.জোবদুল হক চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার ধাইনগর ইউনিয়নের গুপ্তমানিক গ্রামে স্থানান্তর হয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। আমিনুল হক ১৯৪৪ সালে ভারতের কলিকাতা ‘শ্রীরঙ্গন থিয়েটার’এর মাধ্যমে অভিনয় জগতে প্রবেশ করেন। সেই সময়ের কলিকাতার ৫টি থিয়েটারের মধ্যে একমাত্র মুসলিম নাট্যশিল্পী ছিলেন আমিনুল হক। ১৯৪৫ সালে তৎকালীন কলকাতার প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ‘বাবু ফনি বর্শনের’ পরিচালনায় ‘মন্দির’ নামক সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন প্রখ্যাত চলচ্চিত্র-নাট্য অভিনেতা আমিনুল হক।
১৯৪৭ সালে পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডে অবস্থিত তৎকালীন বাংলাদেশ বেতারে ‘নিজস্ব নাট্য শিল্পী’ (Staff Artist) হিসাবে অভিনেতা, লেখক ও প্রযোজক হিসাবে যোগদান করেন আমিনুল হক। ১৯৪৮ সালে ঢাকায় নাট্য আন্দোলনের শুরু হলে, ১৯৫০ সালে নিজস্ব নাট্যগোষ্ঠি ”রুপশ্রী’ গঠন করেন এবং এই নাট্যগোষ্ঠির মাধ্যমে নারী চরিত্রে প্রথম মেয়ে নিয়ে রূপমহল সিনেমা হলে নাটক পরিবেশন করেন সংগঠক- আমিনুল হক।
১৯৫৪ সালে নির্মিত বাংলাদেশের প্রথম সবাক ছায়াছবি ‘মুখ ও মুখোশ’ এ অভিনয় করেন। সিনেমাটি ১৯৫৬ সালে মুক্তি পায়। ১৯৫৬ সাল থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত পর পর ৭টি ছায়াছবিতে নায়কের ভুমিকায় অভিনয় করেন বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি- আমিনুল হক ওরফে আমিন। সিনোমগুলো হলো- ১.আকাশ আর মাটি (এফডিসির প্রথম ছবি) ২.তোমার আমার ৩.জোয়ার এলো ৪.গোধুলির প্রেম ৫.অপরাজেয় ৬.জানোয়ার ৭.আর কেয়া হোগা (উর্দু ছায়াছবি)।
পূর্ব পাকিস্তান ‘বুলবুল একডেমি অব ফাইন আর্টস’ এর নাটক বিভাগের শিক্ষক এবং প্রোডাকশান ইউনিটের জেনারেল ম্যানেজার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন আমিনুল হক। সেই সময় তিনি ইউনাইটেড কিংডাম, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া, মিসর, থাইল্যোন্ড, সিঙ্গাপুরসহ পি-আই-এ আর্টস্ একাডেমির ললিতকলা দল নিয়ে বহু দেশ ভ্রমন করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি বাংলাদেশ বিমানে ‘পাবলিক রিলেশান কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন এবং চাকুরীর মাঝে নিয়মিত বেতার-টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে অভিনেতা, নাট্যকার, নির্দেশক হিসাবে কাজ করে যান। জীবন সাথী, অচেনা অতিথি, দেবর, নসিব, মহানায়ক. ন্যায় বিচার, চাঁপা ডাঙ্গার বৌ, রাবেয়ার মতো বিখ্যাত ছবিসহ আরও ২৫-৩০টি ছবিতে (১৯৭৪ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত) অভিনয় করেন প্রখ্যাত গুণি অভিনেতা- আমিনুল হক ওরফে `নায়ক আমিন’।
তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্মলগ্ন থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত অভিনয়, নাট্যকার, নির্দেশক হিসেবে কাজ করেছেন। তাঁর লেখা ও প্রযোজিত বহু নাটক বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত হয়। বাংলাদেশের নাটকে (বেতার, টিভি ও মঞ্চে) অনবদ্য অবদান রাখার জন্য ১৯৯১ সালে মো.আমিনুল হককে ‘একুশে পদক’ প্রদান করেন বাংলাদেশ সরকার। ২০০৩ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা থেকে ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা শতবর্ষ পূর্তি উৎসব সম্মাননা’ পদকসহ বহু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার-সম্মাননা অর্জন করেন তিনি। ব্যক্তিগত জীবনে এক ছেলের জনক আমিনুল হকের স্ত্রীর হলেন বাংলা চলচ্চিত্রের গুণি অভিনেত্রী- পিয়ারী বেগম (বাংলাদেশের প্রথম সবাক ছায়াছবির অভিনেত্রী অর্থাৎ `নায়ক আমিনর নায়িকা)। বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি, প্রখ্যাত নাট্য-চলচ্চিত্র অভিনেতা- মো.আমিনুল হক ওরফে `নায়ক আমিন’ ২০১১ সালের ৩১শে জুলাই মৃত্যুবরণ করেন। {অসমাপ্ত…/ বিস্তারিত প্রকাশিতব্য মূল গ্রন্থ- ‘আলোকিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ’ (চাঁপাইনবাবগঞ্জের দু’শো বছর ইতিহাসের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সংক্ষপ্তি জীবনী)}