আবুল কালাম আজাদ

জাতীয় বীর (সিলেটে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহত-শহীদ), বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অহংকার, র‌্যাবের গোয়েন্দাপ্রধান, খ্যাতিমান ক্রীড়াবিদ ‘লে.কর্নেল আবুল কালাম আজাদ (রাসেল)’ ১৯৭৫ সালের ৩০ অক্টোবর চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের সাহাপাড়ার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা রেজাউল করিম এবং মাতা সায়েদা করিম। এলাকা এবং সহপাঠিদের কাছে পরিচিত ছিলেন রাসেল (ডাক নাম) নামে। চাকুরি সুবাদে ঢাকায় থাকতেন তাঁর বাবা। সেখানেই তাঁর উচ্চ শিক্ষা এবং পরবর্তী জীবন কেটেছে। দুই ছেলে ও এক মেয়ে জনক আবুল কালাম আজাদের স্ত্রীর নাম সুরাইয়া সুলতানা।
১৯৯৬ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাসের পর বিএমএ ৩৪তম দীর্ঘমেয়াদি কোর্সে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। তিনি ৬ বেঙ্গল রেজিমেন্টের একজন কর্মকর্তা। ২০০৫ সালে তিনি সিলেটের জালালাবাদ সেনানিবাসে প্যারাট্রুপারে প্রশিক্ষণ নিয়ে ‘প্যারা কমান্ডো’ হিসেবে উত্তীর্ণ হন। ২০১১ সালের দিকে ‘মেজর আজাদ’ র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার উপ-পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। ২০১৩ সালের অক্টোবরে তিনি লে. কর্নেল পদে পদোন্নতি নিয়ে গোয়েন্দা শাখার পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান। নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন বিশেষ করে জেএমবি, হরকাতুল জিহাদ ও হিযবুত তাহরিরের সদস্যদের গ্রেফতারের ব্যাপারে লে. কর্নেল আজাদের অবদান রয়েছে। জঙ্গিবাদ এবং অপরাধ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকার জন্য বিপিএম (বাংলাদেশ পুলিশ পদক) এবং পিপিএম (প্রেসিডেন্ট পদক) পুরস্কারে ভূষিত হন লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদ।
ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী আবুল কালাম আজাদ শুধুমাত্র সেনাবাহিনী কিংবা র‌্যাবের চৌকস অফিসারই নন, ভালো ক্রিকেটার-ক্রীড়াবিদ হিসেবেও তাঁর খ্যাতি রয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদানের আগে তিনি দীর্ঘ ছয় বছর বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি) প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন বিকেএসপির ক্রিকেটের প্রথম ব্যাচের স্টুডেন্ট। তাঁর ব্যাচমেট ছিলেন একসময়ের জনপ্রিয় ক্রিকেট তারকা নাইমুর রহমান দুর্জয়, কোচ মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। যারা আজ বাংলাদেশের ক্রীড়া জগতের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিত্ব। সে সময়ে তাঁদের কোচ ছিলেন বিসিবি’র ন্যাশনাল গেম ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার নাজমুল আবেদীন ফাহিম। আবুল কালাম আজাদ খুবই ভালো ‘বাঁ হাতি ব্যাটসম্যান’ ছিলেন। ফিল্ডিংও খুব ভালো পারতেন। বিকেএসপির প্র্যাকটিসের অসংখ্য জেতা ম্যাচে তাঁর অনেক অবদান রয়েছে।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব ) ইন্টেলিজেন্স উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবুল কালাম আজাদের মৃত্যু হয়েছে মস্তিষ্কে বোমার স্পিøন্টারের আঘাতে। ২০১৭ সালের ২৫ মার্চ সিলেটের শিববাড়ীতে জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের সময় পাঠানপাড়া এলাকায় বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় তাঁর মাথায় স্পিলিন্টার ঢুকে যায়। দেশ-বিদেশে টানা পাঁচ দিন চেষ্টা করেও চিকিৎসকরা লেফটেন্যান্ট কর্নেল আজাদকে বাঁচাতে পারেননি।
আবুল কালাম আজাদ ২০১৭ সালের ৩১ মার্চ মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর জানাজায় অংশ নেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক, র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়াসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। জানাজা শেষে তারা আবুল কালাম আজাদের মরদেহে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর র্যাব সদস্যরা তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ঢাকার সামরিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। অত্যন্ত পরিশ্রমী, বিনয়ী, স্মার্ট আর্মি অফিসার লে.কর্নেল আজাদ ছিলেন একজন প্রচারবিমুখ মানুষ। সাংবাদিক-মিডিয়া ব্যক্তিত্ব কিংবা পেশাগত সংশ্লিষ্টসহ সকলের কাছেই তিনি ব্যাপক জনপ্রিয় ছিলেন। {অসমাপ্ত…/ বিস্তারিত প্রকাশিতব্য মূল গ্রন্থ- ‘আলোকিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ’ (চাঁপাইনবাবগঞ্জের দু’শো বছর ইতিহাসের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সংক্ষিপ্ত জীবনী) }